মুহাদ্দিস শাফিউর রহমান আফসারী ॥ রমজান মাসকে তিনভাগে বিভক্ত করার রহস্য হলো মানুষও আমলের দিক থেকে তিনভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগ যাদের পাপের বোঝা নেই তারা রমজানের প্রথম দিন থেকেই আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হবে। দ্বিতীয় যাদের হাল্কা পাপের বোঝা রয়েছে তারা আজকে ১০ রোজা পালন শেষে আল্লাহর মাগফিরাতের প্রত্যশা করতে পারে। তৃতীয় যারা অধিক পাপিষ্ট তারা অনেক দিন রোজা রাখার পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়। এ কারনেই পবিত্র মাহে রমজান কে আল্লাহ পাক তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। এর প্রথম ভাগ রহমত আর দ্বিতীয় ভাগ মাগফিরাত এবং শেষ ভাগ হচ্ছে নাজাত বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আজ রোজার প্রথম পর্ব অর্থাৎ রহমতের ভাগ শেষ হচ্ছে। এ পর্যায় এসে আমাদের দেখা উচিত পবিত্র রমজানের আসল উদ্দেশ্য যে তাকওয়া বা খোদাভীরু তা অর্জন করা সে লক্ষ্যের কতটুকু আমরা অর্জন করতে পেরেছি?
আমরা কি আল্লাহর ভয় আমাদের মনে প্রানে আনতে পেরেছি? আমরা কি রোজার মাধ্যমে আল্লাহওয়ালা লোক হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে পেরেছি? আমরা কি আল্লাহর নিরানব্বই ভাগ রহমতের কোলে আশ্রয় নিতে পেরেছি? আর মহান আল্লাহতায়ালা তার রহমতের মাত্র একভাগ পৃথিবীর সকল প্রাণীকে ভাগ করে দিয়েছেন আর বাকি নিরানব্বই ভাগ রহমতই আল্লাহ তাঁর পবিত্র কুদরতে রেখে দিয়েছেন। এ পবিত্র রমজানেই আল্লাহর রহমতের মহিমা সবচেয়ে বেশী পরিমান বর্ষণ হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তায়ালার দেয়া রোজার আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে খোদাভিরু তা অর্জনের এক মিশন। আর এ মিশন সফল হবে যদি আমরা রোজার প্রকৃত হক আদায় করে রোজা পালন করতে পারি। এখন দেখতে হবে রোজার হক আসলে কি?রোজার হক হলো, যে উদ্দেশ্যে রোজা আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের উপহার দিয়েছেন সে উদ্দেশ্য পূর্ন হওয়া অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যেভাবে রোজা আদায়ের মাধ্যমে আমাদের মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করতে বলেছেন তা করতে পারি তবেই রোজার হক আমরা আদায় করতে পারলাম। রোজার এ মহান মিশন যদি সফল না হয় তবে মনে করতে হবে রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আর যদি আমরা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর ভয় আমাদের মনে-প্রানে যথার্থ ভাবে প্রবেশ করাতে পারি, তবেই রোজার মাধ্যমে আল্লাহর আসল উদ্দেশ্য বা মিশন সফল হল। রোজার মিশন হলো তাকওয়া, আর তাকওয়া হলো আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসার অনূভুতি। আলাহ তাযালার প্রতি ঈমান আর তার সিমাহীন অনুগ্রহের অনুভ’তি থেকে তার প্রতি আমাদের ভালবাসা তৈরি হয়। আর তাঁর অনান্য গুনাবলী রাগ-ক্ষোভ এবং শাস্তিদানের ক্ষমতার ধারণা ও বিশ্বাস থেকে আল্লাহর প্রতি ভয়ের সৃষ্টি হয়। আর এ ভালবাসা আর ভয়ের মানসিক অবস্থার নাম তাকওয়া। আর তাকওয়া সকল ভাল কাজের উৎস এবং মন্দ কাজ থেকে বেচে থাকার উপায়। এ জন্যই পবিত্র কুরআনের একেবারে প্রথম দিকে সুরা বাকারায় এরশাদ হচ্ছে , এ কিতাব অর্থাৎ কুরআন থেকে তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকীগনই হেদায়েত লাভ করেতে পারবে। আর একজন প্রশ্নকারী হযরত উমর (রা)কে প্রশ্ন করেন, হে আমীরু ল মুমিনীন! তাকওয়া কী? উত্তরে তিনি বলেন, গোনাহের কাঁটাযুক্ত পথে সর্তকভাবে সওয়াবের পথচলাই হলো তাকওয়া।