ক্রীড়া ডেস্ক :
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ শেষ হয়েছে। সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর। মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা, ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে সমালোচিত হন তিনি। এখানেই থেমে থাকেননি, পুরস্কার বিতরণীতে গিয়ে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে তীব্র সমালোচনা করেন। এমনকি আয়োজকদের অনুষ্ঠানে কাকে ডাকা উচিৎ কি উচিৎ না এসবও শুনিয়েছেন।
বিসিবিকে শিষ্টাচার শেখানো হারমানপ্রিত ব্যক্তিজীবনে অসদুপায় অবলম্বন করেছিলেন। জাল সনদ বানিয়ে পাঞ্জাব পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৭ বিশ্বকাপে হারমান ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। ব্যাট হাতে ৯ ম্যাচে ৮ ইনিংসে খেলতে নেমেছিলেন। করেছেন ৩৫৯ রান, ২ ম্যাচে ছিলেন অপরাজিত। যার একটিতে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৭১ রানের ইনিংস। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
অসাধারণ অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যের কারণে পাঞ্জাব প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং এই অলরাউন্ডারকে প্রদেশের ডেপুটি সুপারিডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) পদে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেসময় তিনি তখন পশ্চিম রেলওয়েতে অফিস সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
নতুন চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার সময় চৌধুরী চরণ সিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশের সনদ জমা দেন হারমানপ্রীত। সাময়িকভাবে সেটা যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত করে পাঞ্জাব পুলিশ। পুলিশের ডিএসপি হিসেবে চাকরিও পেয়ে যান ভারতের নারী ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক।
কিন্তু চিত্রনাট্যে চমক নেমে আসে কয়েকদিন পরই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানায় হারমানপ্রীতের রোল নম্বর তাদের রেকর্ডবুকে নেই। এরপরই সাড়া পড়ে যায় পুরো দেশে; মুহূর্তের মাঝে জাতীয় তারকা থেকে ট্রলের শিকার হন এই ক্রিকেটার।
তবে ভাগ্যদেবী হারমানের প্রতি সহায় ছিলেন বলতেই হয়। কেননা এত বড় প্রতারণার শিকার হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনেনি পাঞ্জাব পুলিশ। যদিও ডিএসপি থেকে কনস্টেবল করে দেওয়া হয়। কিন্তু মামলা করা হলে মনে রাখার মত শাস্তি পেতে পারতেন তিনি, কেড়ে নেওয়া হতো অর্জুনা পুরস্কার। যা ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড লড়ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে। দশম উইকেট জুটিতে জয়ের দিকে এগুতে থাকা ইংলিশ ব্যাটার চার্লি ডিনকে মানকাড আউট করে থামিয়ে দেন দিপ্তি শর্মা। যদিও ক্রিকেটের আইনে এই আউটে কোনো সমস্যা নেই, তবুও সেই আউট নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। তবে সেই বিতর্কিত ঘটনাকে ‘পার্ট অব গেম’ বলে মত দিয়েছিলেন অধিনায়ক হারমান।
লম্বা একটা সময় মিতালি রাজ ছিলেন ভারত নারী দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার অবসরের পরই অধিনায়কত্ব আসে হারমানপ্রিতের কাঁধে। তবে ব্যক্তি জীবনে বিতর্কিত এই ক্রিকেটার অন্যতম সেরা পারফর্মার হলেও পেশাদারি হতে পারেননি পুরো। নিজেদের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত না গেলেই সরাসরি আঙুল তুলেন আম্পায়ারের দিকে, প্রকাশ্যে ছোট করেন প্রতিপক্ষকে।
যা নজর এড়ায়নি বিসিবি পরিচালকদেরও। বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তাই ভারতীয় অধিনায়ক ভদ্রতা শিখে মাঠে নামতে বলেছেন, ‘রিপ্লেগুলো যখন দেখেছি তখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কথা বলা বা প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। আর ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। এই জায়গায় আপনাকে অবশ্যই ভালো খেলোয়াড় হওয়ার আগে ভদ্রতা ও ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তারপর আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ খেলব, মন্তব্য করব।’
