নিজস্ব প্রতিবেদক
অনেক দিন পর জমে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল যশোরের মনিহার। ঈদের দিন থেকে প্রদর্শিত হচ্ছে শাকিব খান অভিনীত হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ ছবিটি। যশোরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে শাকিব-ইধিকা পালের প্রেমজ সম্পর্কে দেখতে ছুটে আসছেন সিনেমা প্রেমীরা। প্রিয়তমা দেখে দর্শকরা বললেন শাকিব খানের অভিনয়ে মুগ্ধ তারা। প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশে যে বাংলা সিনেমার দুর্দিন চলছে; তার ভিতরে এই সিনেমাটি ব্যবসা সফল। প্রতিদিন চারটি করে শো’র মধ্যে প্রায় সব শো হাউসফুল যাচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল হিসেবে পরিচিত যশোরের মনিহার। এক সময় ঢাকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই হলে সিনেমা মুক্তি দেওয়া হতো। তবে সেসব আজ ইতিহাস। অতীতে অনেক ব্যবসা সফল ছবি মুক্তি পেয়েছে হলটিতে। একসময় জমজমাট ছিল সিনেমার ব্যবসা। ব্যবসার দুর্দিনের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েই মুক্তি পেয়েছে প্রিয়তমা। সিনেমার টিজার, গান দেখে মুক্তির আগেই সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে সিনেমাটি। ঈদের দিন থেকে মণিহারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দর্শক। হলটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের দিন থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ সিনেমাটি দেখেছেন। মণিহারে টিকিটের দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সে হিসাবে মাত্র চারদিনেই প্রায় ১১ লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে এখানে। যদিও মোট কত টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে চাননি হলটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন। যদিও কয়েকটি শো সরেজমিনে দেখা গেছে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়।
প্রিয়তমা রোমান্টিক অ্যাকশন ধাঁচের মৌলিক গল্পের ছবি। দারুণ গল্প, অভিনয় আর প্রিয়তমার শেষ পরিণতি দেখে অঝোরে কেঁদেছেন অনেক দর্শক। কেউ আবার নিজের জীবনের অতীতকেও খুঁজে পেয়েছেন এই সিনেমায়। আবার কেউ খুঁজতে এসেছেন প্রিয়তমার প্রিয়তমাকে। দীর্ঘ ১২ বছর পর নড়াইল থেকে পরিবার নিয়ে হলে এসেছেন রোকেয়া বেগম। জানালেন বাংলাদেশে সিনেমার প্রেক্ষাপট বদলেছে। একটা সময় ছিলো পরিবার নিয়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য মানুষ সিনেমা হলে আসতেন। তবে মাঝে অনেকটা সময় রুচিহীন ডায়লগ আর গল্পে সয়লাব হয়েছিলো দেশীয় সিনেমা। সেই জায়গা থেকে পুনরায় ফিরে এসেছে বাংলা ছায়াছবি। প্রিয়তমা সম্পর্কে বললেন, শাকিব খান বাংলাদেশের গর্ব। দারুণ গল্প আর অভিনয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য দর্শক।
জীবনে প্রথম হলে এসেছে দারুণ অভিজ্ঞতা হলো কলেজ পড়ুয়া লিজা খাতুনের। বরাবরই শাকিব ভক্ত লিজা। তবে হলে সিনেমা দেখার পরিবেশ না থাকায় সাহস করে কখনো এমুখো ফেরেননি। জানালেন, শাকিব খান ও ইধিকা পালের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। নড়াইল থেকে সিনেমা দেখতে এসে সবুজ সুলতান জানালেন নিজের জীবনের অতীত দেখতে পেয়েছেন প্রিয়তমা সিনেমায়। মনে ধরেছে সিনেমার একটি ডায়লগ ‘তোর থেকে হাজারগুন সুন্দরি মেয়ে বিয়ে করে দেখাবো’ ।
প্রদর্শনী শেষে প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসছিলেন আরেক দর্শক নিলুফা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘সিনেমার শেষ দৃশ্যটি অনেক কষ্টের। দর্শকদের চোখে জল চলে আসে। খুব কেঁদেছি।’
সাব্বির হোসেন নামে এক দর্শক বলেন, সাকিব খান যে অভিনয় করে; সেটা থেকে এই সিনেমা ব্যতিক্রম। সিনেমা দেখে অনেক ভালো লাগলো। সাকিবের যে লুক; এই সিনেমাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগের সিনেমা থেকে তার এই সিনেমাতে অভিনয় অনেক ভালো হয়েছে।
খুব সুন্দর ছিলো সিনেমাটা। বলা যায় অসাধারণ। খুব ইমোশনাল সিনেমা। এই রকম সিনেমা আমরা প্রত্যাশা করি। শেষের দৃশ্যগুলো সত্যি মারাত্মক ছিলো।
ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ থেকে দল বেঁধে এসেছে কলেজ পড়ুয়া সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, চোখে জল আসার মতো গল্প। বারবার সাকিব খান তার প্রিয়তমাকে ভুলে না গেলেও বারবার ভুলে যাওয়ার যে অভিনয় করেছে সাকিব খান; সেটা অসাধারণ। অনেকের জীবনে এ ধরণের কাহিনি লুকায়িত আছে যে; আমরা প্রিয়তমাকে রাগ করে ভুলে যেতে পারি, আসলে প্রিয়তমাকে ভুলা যায় না। যদিও সিনেমা হলে প্রথমবার এসেছি। আমার দেখা সাকিব খানের বেষ্ট সিনেমা এটি।
হলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, শাকিব খানের ছবি সবসময় ব্যবসা সফল হয়। তবে প্রিয়তমা হয়তো রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। ঈদে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা এখন পর্যন্ত প্রায় সব গুলো শো হাউজফুল চলেছে। দেশে যে বাংলা সিনেমার দুর্দিন চলছে; তার ভিতরে এই সিনেমাটা ব্যবসা সফল। পরানের ও হাওয়া সিনেমার পর ব্যবসা সফল সিনেমা প্রিয়তমা। আগামি সপ্তাহ থেকে আরফান নিশোর সুড়ঙ্গ প্রদর্শিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে প্রিয়তমা দর্শকদের চাহিদা যতদিন থাকবে ততদিন প্রদর্শিত হবে।
এদিকে মৌলিক গল্প ও মানসম্মত সিনেমা হওয়াতে দর্শকটানছে প্রিয়তমা বলে মনে করছেন সিনেমা হল ও দর্শকেরা। ভালো সিনেমা দেখতে রীতিমতো পরিকল্পনা করে দল বেঁধে প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছেন যশোরের দর্শকেরা। বাংলা সিনেমার এই নতুন দর্শকদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ ও নারীরা। দল নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছিলেন তরুণ নাছিম রেজা। তিনি বলেন, ‘এভাবে দল বেঁধে সিনেমা দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু সব সিনেমা দেখতে আসা হয় না। ভালো সিনেমা সবাই মিলে দেখতে আসা হয়। হাওয়ার পরে এই সিনেমা দেখতে এসেছি। এ প্রসঙ্গে হলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু জানান, ঈদের দিন থেকে শুরু হওয়া এ সিনেমাটি তরুণ তরুণীরা পছন্দ করছে। একইসাথে সাকিবের নিজস্ব দর্শক রয়েছে। হলটির ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দর্শক মোটামুটি। প্রিয়তমা ছবিটি আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।