সুলাইমান হাওলাদার, মোড়েলগঞ্জ: সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার ভোলা নদীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকার খারমা নদী হতে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে শরণখোলার বলেশ্বর নদীতে। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে এ নদীর অবস্থান। এক সময়ের খর¯্রােতা এ নদীর বেশ কিছু অংশ পলি জমে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওই সব এলাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়নি। ফলে সুন্দরবনের একটি বড় অংশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। ঝুঁকি বেড়েছে বন সংলগ্ন চারটি গ্রামের মানুষের।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ‘ভোলা নদী’ এক সময় ২৭৫ থেকে ২৮০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত ছিল। যা এখন স্থান ভেদে ৫০ থেকে ৬০ মিটারে পৌছেছে। হারিয়েছে নাব্যতাও। জোয়ারের সময় কোন কোন এলাকায় পানির গভীরতা ১০-১৫ ফুট হলেও ভাটির সময় তা হয়ে যায় হাটুজল। শীত মৌসুমে কোন কোন এলাকা শুকিয়েও যায়। ফলে সংরক্ষিত বনের মধ্যে অবাধে আসা যাওয়ার সুযোগ পায় বন সংলগ্ন বাসিন্দাদের গবাদী পশু। শিকারি, জেলে, মৌয়াল ও কাঠ চোরা কারবারিরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা এই নদী না থাকায় বনের বাঘ, হরিণ, শুকরসহ নানা ধরণের বন্য প্রাণি অনেক সময় খাবারের সন্ধানে আবার কখনো পথ ভুলে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বন্যপ্রাণি লোকালয়ে ঢুকে একদিকে প্রাণহানির শিকার হচ্ছে, অপরদিকে কৃষকের ফসল নষ্ট করছে। ইতোপূর্বে স্থানীয়রা লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘ পিটিয়ে হত্যা করেছে। পাশপাশি স্থানীয়রা তাদের গরু, মহিষ বনের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে নষ্ট করছে গাছপালা।
এছাড়া প্রতিনিয়ত বন সংলগ্ন আমরবুনিয়া, মধ্য আমরবুনিয়া, গুলিশাখালী ও ধানসাগর গ্রামে খাবারের সন্ধানে দল বেধে হামলা করছে সুন্দরবনের শুকর। মাঝে মধ্যে হরিণ, অজগর, বানর, হনুমান লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের অধীন মোড়েলগঞ্জ সীমান্তের মধ্য আমরবুনিয়া, গুলিশাখালী ও ধানসাগর টহল ফাঁড়ি এলাকায় অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে গুলিশাখালী টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা সামসুল আলম আরেফিন বলেছেন, বনের নিকটের বাসিন্দাদের গবাদি পশু বেধে রাখার জন্য নোটিস দেয়া হয়েছে। এর পরেও অনেক সময় গরু মহিশ খাল পার হয়ে বনে ঢুকে পড়ে। ভোলা নদী সংকুচিত ও নাব্যতা হারানোর কারণে এমনটি ঘটছে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
বন সংলগ্ন বাসিন্দাদের মতে, ভরাট হয়ে বেদখল হওয়া ভোলা নদী উদ্ধার করে পুনঃখনন করলে নিরাপদে থাকবে সুন্দরবন। নিরাপদ থাকবে সকল বন্যপ্রাণী, গাছপালা ও বন সংলগ্ন গ্রামগুলোর কয়েক হাজার মানুষ। বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার বিষয়ে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহন ও তা বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে মনে করেন ভূক্তভোগীরা।