নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধ মামলায় বিচারাধীন যশোরের কুখ্যাত রাজাকার আমজাদ হোসেন মোল্লার প্রধান সেনাপতি চিহিৃত সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনী নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এবার তারা মামলার সাক্ষীদের স্বজনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধাপরাধ মামলাসহ নানা হুমকি ধামকি দিয়ে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে জবাই করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমজাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ায় সাক্ষী পরিবারের সদস্য ও তাদের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধী আমজাদের সহযোগীরা।
বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে থাকায় মামলার সাক্ষী ও তদন্ত কাজে সহয়তাকারীদেরসহ তাদের পক্ষীয়দের উপর চলছে নানারকম হয়রানি। কখনো ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, কখনো তাদেরকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে, আবার কখনো বা আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের স্বজনদের রাজাকার বানিয়ে চলছে অত্যাচার-নির্যাতন।
মামলার শুরুতে সাক্ষী এহিয়ারের ভাইপো জহির মোল্যাকে ও সাক্ষী ইছাহক মোল্যার নাতিকে কুপিয়ে জখম করে এবং ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা চালানো ছাড়াও সাক্ষীর ভাই তফসির মোল্যাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসী টুটুল-মহসিন বাহিনী। তবে আশ্চর্যজনকভাবে ওই চিহ্নিত সন্ত্রাসী টুটুল তার এক আত্মীয়ের হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে কাল্পনিক যুদ্ধাপরাধ মামলা দায়েরের পায়তারা করছে সাক্ষীদের স্বজনদের নামে।
এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কো-অর্ডিনেটর তদন্ত সংস্থা, পুলিশ হেডকোয়াটার্স, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি, কোম্পানি কমান্ডার র্যাব-৬ যশোর ও পুলিশ সুপার যশোরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন আমজাদ মোল্লার যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী পক্ষীয়রা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী এবং তদন্তকাজে সহায়তাকারী হিসেবে তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদান এবং সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনীদের বিরূদ্ধে এখনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী ও সাক্ষীরা।
আবেদনে তারা বলেছেন, মামলার শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই আমজাদ রাজাকারের প্রধান সেনাপতি সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনী তাদেরকেসহ অন্যান্য সাক্ষীদের ও তাদের স্বজনদের উপর একাধিকবার হামলা করেছে এবং সাক্ষীর ভাইকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। এমনকি তাদেরকে সরকার বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বানিয়ে বিভিন্ন সময়ে মামলা দায়ের করেছে।
যদিও পরবর্তীতে যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার ও বর্তমানে ডিআইজি-খুলনা রেঞ্জ মঈনুল হকের হস্তক্ষেপে ওই সব মামলার ফাইনাল রিপোর্ট হয়েছে। অচিরেই এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে জেনে বর্তমানে পূর্বের ন্যায় ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের স্বজনদের বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বানিয়ে মামলা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি স্বাক্ষীর স্বজনদের উল্টো যুদ্ধাপরাধ মামলায় জড়ানোর পাঁয়তারা করছে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান সেনাপতি বাঘারপাড়া থানার এক সময়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম টুটুল মন্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শওকত মন্ডল, কুখ্যাত আদম ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার গাড়ি বহরে হামলা-মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি প্রেমচারার সন্ত্রাসী মহাসিন বিশ্বাস,
তার ছোটো ভাই ইব্রাহীম বিশ্বাস, আমজাদ রাজাকারের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম, ছোট ভাই মাসুম বিল্লাহ, চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম প্রমুখ। এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্তমান সময়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সন্ত্রাসীরা তাদের এবং পরিবারের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে। আমজাদের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের পূর্বের ন্যায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বানিয়ে নতুন করে মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্তও করছে। এমন অবস্থায় তারা সকলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী ও তদন্তকাজে সহায়তাকারীদের পক্ষে ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন আলাউদ্দীন বিশ্বাস, খলিলুর রহমান খোকন বিশ্বাস, ডা. বি এম রুহুল আমিন, ইসাহাক মোল্লা, আব্দুল হক মোল্লা, এহিয়ার রহমান, রাকিব উদ্দিন রতন বিশ্বাস প্রমুখ।