ঢাকা অফিস
বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই আবহাওয়ার ‘বিচিত্র আচরণ’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে সাধারণত গরম অনূভূত হবার কথা থাকলেও সম্প্রতি প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টির সাথে ঝড়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যাতে করে তাপমাত্রা অনেকটা নেমে এসেছে।
এদিকে দেশের ৮ বিভাগের কিছু কিছু জায়গার ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বা এর বেশি বেগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিনমাসকে বর্ষাপূর্ব মৌসুম হিসেবে ধরে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই তিনমাস সাধারণত স্থানীয়ভাবে বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে বৃষ্টি নামায়। কখনো কখনো দেশের বাইরে আশপাশ থেকেও বজ্রমেঘ তৈরি হয়ে এসে বাংলাদেশের আকাশে পরিপক্কতা লাভ করে। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।
কিন্তু আবহাওয়া অফিস বলছে, এবারে মার্চ মাসে বেশ ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে। যেটার ধরণ অন্যবারের চেয়ে আলাদা। যদি ১৯৪৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেখি, দেখা যায় যে বজ্রমেঘ সাধারণত গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত উপরে উঠতে পারে, যা কখনো কখনো ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু এবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে তার কনভিকশনটা অনেক উপরে যায় নি। ফলে বৃষ্টিপাতটা মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মতো হয়েছে টানা কয়েকদিন ধরে, বলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
একই সাথে যোগ হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে ৩১ শে মার্চ ও পহেলা এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে মেঘের ঘনঘটা বৃদ্ধি পাবে।
এ দুদিন মাঝারি ঝড়ের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অফিস। একইসাথে বাতাসের গতিবেগও থাকবে বেশি।
যার ঝলক রাজধানী ঢাকায় দেখা যায় বৃহস্পতিবার রাতে। ঝড়ের সময় উত্তরা-এয়ারপোর্ট এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭৪ কিলোমিটার, যা অনেক বেশি বলছে আবহাওয়া বিভাগ। আগামী দুদিন ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।
তবে এই সময়টায় ব্যতিক্রম হচ্ছে গড় তাপমাত্রা। সাধারণত মার্চ মাসের শেষদিকে তাপমাত্রা গড়ে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখা যায়, যা সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে। কিন্তু সেই তাপমাত্রা এখন কমে গিয়েছে বলে জানান আবুল কালাম মল্লিক ।
প্রি মুনসুন সিজনে যদি বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে সার্ফেস টেম্পারেচার ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যেতে পারে। যেহেতু বৃষ্টিপাত ছিল সে কারণে লোয়ার লেভেল টেম্পারেচার আমাদের দেশে এখন দিনে গড়ে ৩২ ডিগ্রী আর রাতে তা ২২ ডিগ্রীতে নেমে আসছে। সুতরাং অবনমন আছে।
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট বলছে ৩১ মার্চ রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা খানিকটা কম। একইসাথে বজ্রঝড়সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বেশকিছু জেলায়।
মার্চ মাসে এ রকম টানা ৫ দিন বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত খানিকটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আগে সাধারণত মেঘ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এসে বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্বে চলে যেত। কিন্তু এবার বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি লঘুচাপের কারণে বাংলাদেশে জলীয়বাষ্পের যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌসুমি বৃষ্টির বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে, বলেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
তিনি এর কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটা প্রভাবের কথা বলছেন। তবে বর্তমান আবহাওয়া সিমুলেশনের মাধ্যমে আরেকটু বিশ্লেষণ করে কারণ জানার চেষ্টা করবে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে এপ্রিল মাসকে কালবৈশাখীর সময় বলে মনে করা হয়। ১৯৮১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এপ্রিল মাসে ১২ থেকে ১৩ দিন দেশজুড়ে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। একই সাথে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এপ্রিল মাস যেহেতু প্রকৃতি একটু বিরুপ থাকে, উত্তপ্ত থাকে, তাই হালকা থেকে মাঝারি ধরণের তাপপ্রবাহ হবার আশঙ্কা রয়েছে, কখনো যা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে, বলেন মি. মল্লিক।
সেজন্য এ সময় বাড়তি সতর্কতা দরকার বলে মনে করছেন মি. মল্লিক। কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত আধাঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা স্থায়ী হয়। এসময় তাই বজ্রমেঘ বা পাহাড়ের মতো মেঘ দেখলে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
আর যারা প্রান্তিক কৃষক, খোলা মাঠে কাজ করেন তাদের আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত অনুসরণ করতে হবে। তাহলে বজ্রপাত এড়ানো সম্ভব।
তবে বাংলাদেশে ঝড়প্রবণ এলাকায় বেশি বেশি বজ্রনিরোধক ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ বসানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা।
কালবৈশাখী-শিলাবৃষ্টির সতর্কবার্তা দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর : দেশের ৮ বিভাগের কিছু কিছু জায়গার ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বা এর বেশি বেগে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ১৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গার ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বা আরও বেশি বেগে কালবৈশাখী ঝোড়ো হাওয়া ও বিজলি চমকানোসহ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।