নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ভৈরব নদ খননের নামে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। শহরের কাজীপাড়ার আব্দুল আজিজ সড়কের তেঁতুলতলা কালভার্টের নিকটবর্তী ভৈরব নদের বুকে ড্রেজিং মেশিন স্থাপন করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘জনউদ্যোগ যশোর’ সংগঠনের ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার কালেক্টরেট ভবন চত্বরে মানববন্ধন করা হয়েছে। এরআগে সংগঠনটির উদ্যোগে স্মারকলিপি, প্রেস মিট করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সূত্র মতে, নদের এই অংশ খননের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসএসএন্ডএমটি। এ প্রতিষ্ঠানটি খননের নামে তেঁতুলতলা কালভার্টের নিকটবর্তী স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে। প্রথম দিকে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পুলিশ লাইনের মধ্যে নিয়ে যান। ওই পুকুরটি ভরাট সম্পন্ন হয়েছে। অবশ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিা ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) ফিরোজ হোসেনের দাবি, সেগুলো বালু নয়; মাটি। নদের দুই পাড়ে রাখার জায়গা না থাকায় দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর এখন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি নদের ধারে একটু জায়গার ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে মাটি রাখা হচ্ছে। মাটির সাথে অল্প অল্প বালু উঠতে পারে। খনন করলে মাটির সাথে বালু উঠতে পারে। তবে সেগুলো স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিক্রি করে দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু হাসছিলেন। এক পর্যায়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল মানববন্ধনে বক্তব্যে জনউদ্যোগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, গত মে মাসের দিকে ভৈরব নদের তেঁতুলতলা কালভার্টের নিকটবর্তী অংশে ড্রেজিং মেশিন স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে এক কিলোমিটারের বেশি দূরে নিয়ে পুলিশ লাইনসের মধ্যবর্তী একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এখন পৌরসভার এক জনপ্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে দুই পাড়ের ভূমি ধস ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত ৫ মে প্রেস মিট ও ৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন মানববন্ধনে তার বক্তব্যে বলেন, সরকার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদ খনন করেছে। সেখানেও লুটপাট হয়েছে। খননের নামে কচুরিপনা পরিষ্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও মাটি কেটে পাড়ে ফেলে নদ খালে পরিণত করা হয়েছে। এজন্য নদ প্রবাহমান হয়নি।
নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ভৈরব নদের দখল দূষণ ও বালু উত্তোলন হচ্ছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকটবর্তী স্থান থেকেই। প্রশাসন সব জানে। তাই এখন আইনগতভাবে মোকাবিলা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের তৎপরতা আছে। যারা বালু উত্তোলন করে; তারা গোপনে অথবা রাতের আঁধারে করেন। এ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, খনন কাজ চলমান থাকার সময় শহরের ড্রেন দিয়ে নদে এসে পড়ছিল ময়লা আবর্জনা। ঠিকাদার এসব সরাতে ড্রেজিং মেশিন স্থাপন করেছিলেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ড্রেজিং মেশিন দিয়ে সম্প্রতি মাটি কাদা নদের পাড়ে রাখা হচ্ছে। কিছু বালু উঠলেও উঠতে পারে। সেখান থেকে শুধু বালুই উত্তোলন করছে সেটা সরাসরি বলা ঠিক হবে না। তবে এ বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোরের সভাপতি হারুণ-অর-রশিদ, যশোরের উপশহর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহিন ইকবাল, জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুমা বেগম, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফারাজী আহম্মেদ সাঈদ বুলবুল ও সাজেদ রহমান, জেলা যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দাস প্রমুখ।
