নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী ও নকল নবিশ নূর নবীর ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্রে একাধিক নিউজ প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাদের অর্থবাণিজ্যের ভাগ উপর মহলে যায় বলে কোন শাস্তি হয় না বলে অফিসের অনেকে জানিয়েছেন। শুধু ঘুষ বাণিজ্য নয়, তাদের খামখেয়ালিপনায় গত তিনদিন আগে আদালতের হাজতবাসের শিকার হয়েছেন মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তারা কর্তব্য অবহেলার জন্য ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
অফিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালের একটি মামলার গত ১৫ জানুয়ারি বালাম বই তলব করেন আদালত। আদালতে বালাম বই নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রেকর্ড কিপারের। কিন্তু রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী আদালতে না গিয়ে মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদকে দিয়ে বালাম বইটি আদালতে পাঠায়। আদালতের বিচারক স্পর্শকাতর বিষয়ে একজন মোহরারকে দিয়ে বই পাঠানো অবমাননার শামিল বলে মনে করেন। বিচারক শহিদকে দুই ঘণ্টা আদালতের হাজত খানায় আটকিয়ে রাখে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে যশোর সদরের সাব- রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান ও রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী আদালতে হাজির হয়ে মুচলেকার মাধ্যমে শহিদুল ইসলাম শহিদকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ওই বালাম বইয়ের তিনটি পাতা ছিড়ে ফেলা হয়। বইয়ের তিনটি পাতা নেই। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী ও নকল নবিশ নূর নবী দীর্ঘদিন ধরে বালাম বইয়ের পাতা ছিড়ে লাখ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ।
শুধু তাই নয়, বালাম বই থেকে পাতা সরানো থেকে বালাম উধাও করে থাকে এই চক্রটি। যশোর ১৯৭৮ সালের ২২৭১ নং দলিলের ৭১ নম্বর ভলমের ৯৭ থেকে ১০০ পাতা পর্যন্ত উধাও করে দিয়েছে চক্রটি। এই চার পাতার দলিলে কি ছিলো তা এখন কেউই কিছু জানে না।
রেজিস্ট্রি অফিসে কোন কাজ করতে গেলে পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। রেজিস্ট্রি করা ছাড়াও নকল কপি তুলতে, ভিজিট কমিশনে গেলে, দলিল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিতে, রদ ও রহিদে ঘুষ এমকি বায়না চুক্তিতে ঘুষ দিতে হয়। এক কথায় ঘুষ ছাড়া কাজই হয় না এই অফিসে।
সূত্র জানায়, ভৈরব চক্রবর্তী ও নূর নবী সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়তনামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা ভৈরব চক্রবর্তী ও তার প্রধান সহযোগী নূর নবী। এরা দলিল লেখকদের যোগসাজসে ঘুষ বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকেন। এদের মাধ্যমে আসা টাকার ভাগ চলে যায় বিভিন্ন পর্যায়ে।
ভৈরব আর নূর নবীর অপকর্মের শিকার হয়ে মোহরার শহিদুল ইসলাম শহিদ হাজত বাস করেন। ঘুষ-দুর্নীতির মহানায়করা আড়ালে থেকে নিজেদের রক্ষা করে চলেছেন। এসব দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়ায় রেজিস্ট্রি অফিসে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিসহ লাখ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়ে থাকে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত নূর-নবীর কাছে রেজিস্ট্রি অফিসের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সব কিছুই মিথ্যা ষড়যন্ত্র। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীকে ফোন দেয়া হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: যশোরে বাজারজাত ‘মোস্তফা সয়াবিন তেল’র মান প্রশ্নবিদ্ধ
১ Comment
Pingback: ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত ফটো সাংবাদিক বাবুল - দৈনিক কল্যাণ