সালমান হাসান: রাতে জড়ো হচ্ছে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। পাড়া-মহল্লায় মহড়া দিয়ে ত্রাস ছড়াচ্ছে। নৌকায় ভোট না দিতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। যশোর সদরের চুরামনকাটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে একাট্টা হয়েছে বিদ্রোহীরা। ভোটার উপস্থিতি কমাতে ইউনিয়ন জুড়ে চলছে ত্রাসের রাজত্ব। নৌকা ডোবাতে বিএনপি-জামায়াতেরও শরণাপন্ন হচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ‹ৃতরা।
দলের শীর্ষ এক নেতার মাধ্যমে দেনদরবার করেও নৌকার মাঝি হতে ব্যর্থ হয়েছেন ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান। বিরাট অংকের অর্থ ব্যয় করেও গতবারের মাঝি আব্দুল মান্নান মুন্নার হাত ছাড়া হয়েছে নৌকা। তার বদলে দাউদ হোসেন দফাদারকে মনোনয়ন দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবি, নৌকার বিজয় ঠেকাতে যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। দল মনোনীত প্রার্থীকে কোনঠাসা করতে চলছে ঘুঁটি চালাচালি। দলীয় ভোটে চিড় ধরাতে এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে নৌকা-বিদ্রোহে মাঠে নেমেছেন চার জন। নৌকা ঠেকাতে চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না ছাড়াও আরো তিন জন ভোটের মাঠ চষছেন। এদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অন্য দুইজন হলেন শ্রমিক লীগ নেতা মো. বাদশাহ ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ নেতা আলমগীর কবীর মিলন।
সূত্র বলছে, নৌকার প্রার্থীকে কোণঠাসা করতে ওই শীর্ষ নেতার ইন্ধনে তারা ভোটের মাঠে রয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কারের পরও তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি।
এদিকে, রাতে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় ভয় গ্রাস করছে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের জনমন। তাদের প্রকাশ্যে চলাফেরায় ভোটারদের মধ্যে ত্রাস ছড়াচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কিনা সেটি নিয়েও শঙ্কা ও সংশয় বাসা দানা বেধেছে। চরমপন্থীদের তৎপরতায় ভোটারদের মত প্রার্থীরাও মনে করছেন নির্বাচন সহিংসতায় মোড় নিতে যাচ্ছে।
নৌকা ঠেকাতে ভাড়া খাটছেন প্রয়াত চরমপন্থী নেতা শরিফুল ইসলামের সহচর কালীগঞ্জের সোনা। শরিফুল জীবিত থাকাকালীন চরমপন্থী সন্ত্রাসী সোনা তার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এখনও চরমপন্থার অভিযোগ আছে। রাতের আঁধারে চুড়ামনকাটিতে তার নেতৃত্বে বারোবাজারসহ আরো অন্যান্য এলাকা থেকে চরমপন্থী দলের ক্যাডাররা চুড়ামনকাটিতে জড়ো হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চাচ্ছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি দাউদ হোসেন দফাদারও চরমপন্থী সন্ত্রসীদের তৎপরতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, নৌকার বিজয় ছিনিয়ে নিতে চুড়ামনকাটিতে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা জড়ো হচ্ছে। ভোট প্রভাবিত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে তারা।
নির্বাচনী এলাকাটির গ্রামগুলো ঘুরে সব প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই কমবেশি সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নৌকার প্রার্থীও সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন বলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বহু সংখ্যক মামলার আসামি রবিউল। মাদককারবারী আমির। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের বিতর্কিত কর্মচারী বাদলসহ স্থানীয় বেশ কিছু সন্ত্রাসী তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে তার দাবি, রবিউল ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। তার মত দলের অনেকেই নৌকার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। একটা আদর্শকে ধারণ করে তিনি রাজনীতি করেন। কোন ধরণের সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে তিনি নির্বাচনী কোন কাজে অংশ নিচ্ছেন না। পরাজয় নিশ্চিত; এমনটি বুঝতে পেরে এগুলো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার।
স্থানীয়দের দাবি, একেক প্রার্থী ভিন্ন ভিন্ন মিশন নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন। নির্বাচন জিততে পারলে তাদের সেগুলো পূরণ হবে। যার কারণে বিজয়ী হতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সবাই। বিদ্রোহী একজন প্রার্থী গত ৫ বছর ধরে জগহাটি বাওড় দখল রেখেছেন। স্থানীয় বাগদি সম্প্রদায় আগে বাওড়টিতে মাছ চাষ করতো। তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে এখন তিনি মাছ চাষ করছেন। শ্রমিক নেতা বাদশাহর বিরুদ্ধে রয়েছে পরিবহন সেক্টর থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ও শ্রমিক নেতা বাদশাহ বলেন, চাঁদা তুললেও সেই টাকা আমি নিজের কাজে ব্যয় করি এমন নজির নেই। সেই টাকার পুরোটায় শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করি। তিনি বলেন, তার প্রয়াত দাদা ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মকছেদ আলী জীবনভর জনগণের স্বার্থে কাজ করে গেছেন। তিনিও তার দাদার মত ইউনিয়নবাসী সেবা করতে চান। যার কারণে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না বলেন, তার মেয়াদে চুড়ামনকাটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দুস্থ ও প্রকৃতরা সরকারি বিভিন্ন ভাতা সুবিধা তার সময়েই যথাযথভাবে পেয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, তিন চেয়ারম্যান হওয়ার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ঠ উন্নয়ন হয়েছে। চুড়ামনকাটি মহাসড়কের ডাকাতি বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য হলো জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল নানান কুৎসা রটনা ও অপ্রচার চালাচ্ছে।
সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই সৈয়দ শাহীন ফরহাদ বলেন, চরমপন্থী তৎপরতার কোন অভিযোগ তাদের কাছে নেই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।