মোস্তফা কামাল: প্রবাদে থাকলেও মাঘের শীত কোথাও বাঘের গায়ে লাগার নজির নেই। উত্তরবঙ্গের মানুষের নাস্তানাবুদের আপডেট তথ্য গণমাধ্যমে আসছে নিয়মিত। তবে শীতের ঘা আচ্ছা মতো লেগেছে নির্বাচন কমিশনের গায়। সব ঠিক থাকলে তাদের মেয়াদের ডেটলাইন সামনের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।
বিদায়ের এ সন্ধিক্ষণে নতুন করে নিজেকে সাবজেক্ট-অবজেক্ট দুটাতেই গেঁথেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তার সমালোচনা করায় এক হাত নিয়েছেন বিশেষ কয়েকজনের ওপর। একদম নাম ধরে-ধারে। নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদাকেও ছাড়েননি। নতুন কিছু তথ্য দিয়ে ধরেছেন তার সহকর্মী কমিশনার মাহবুব তালুকদারকেও। রাম ধোলাই যাকে বলে। তাও আড়ালে–আবডালে নয়। একেবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে। ভাষা কেবল আক্রমণাত্মক নয়, সঙ্গে সাধারণদের জন্য টাটকা তথ্যও। এতোদিন অপ্রকাশিত বা লুকানো থাকলেও, পুরনো হলেও ভালো রসদ দিয়েছেন গণমাধ্যমকে।
তিনি ‘বর্তমান ইসির ভালো নির্বাচনের সদিচ্ছাই ছিল না, তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করেছে, কেবল ‘বিতর্ক সৃষ্টি করেছে’-সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদার এ মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন চাছছিলাভাবে। শামসুল হুদা আমিত্বে ভুগছেন বলে মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছেন রকিবুল হুদা। বলেই বসেন,২০০৭-০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময়ের সিইসি হিসেবে শামসুল হুদা ‘বিরাজনীতির পরিবেশে সাংবিধানিক ব্যত্যয়’ ঘটিয়েছেন। ৯০ দিনের মধ্যে করার বিধান থাকলেও নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পর। এ সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে- এ প্রশ্নও ছোঁড়েন তিনি। প্রশ্নমালা এখানেই শেষ করেননি তিনি।
আরো যোগ করেন :
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনকে কিভাবে প্রার্থীদের হলফনামা প্রচারের কাজ দিয়েছেন? বদিউল আলম মজুমদারকে লাখ লাখ টাকা কীভাবে দিলেন?এই লোক দুই বছর আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছেন। একা একা এসেছেন।…তার সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করা যায় না, বিশ্বাস করা যায় না। উনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ নন। সংবিধান বিশেষজ্ঞও নন। সংবাদ সম্মেলন করার বিশেষজ্ঞ।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে আরো বলেন, আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তিনি সুজনকে কোনো কাজে সম্পৃক্ত করেননি। কারণ বদিউল আলম মজুমদারকে নিয়ে অনেক ঝামেলা, অনিয়ম। এক কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, কাজ না করে টাকা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনে সভায় অনিয়ম নিয়ে সিদ্ধান্ত আছে। কাগজ দিয়ে বই তৈরি করেন, …এ কাজ করার কী দরকার?… এগুলো দিয়ে ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা বানানো ছাড়া কোনো কাজ নেই।
শৈত্য প্রবাহের এই মাঘে বাঘ না চড়লেও আলোচনার খোরাক সাপ্লাই হয়েছে বিদায়ী সিইসির বক্তব্যে। সহকর্মী মাহবুব তালুকদার সম্পর্কে কিছু প্রতিক্রিয়া তিনি আগেও দিয়েছেন। এবার তাকে ‘রোগাক্রান্ত’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ইসিতে তিনি ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এই রোগাক্রান্ত মাহবুব কখনো আইসিইউতে, কখনো সিসিইউতে ছিলেন। সিঙ্গাপুর- ভারতেও চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব চিকিৎসার ব্যয় কমিশন থেকে করা হয়। এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা।
মাহবুব তালুকদার বা বদিউল আলম মজুমদার সম্পর্কে নুরুল হুদার দেয়া তথ্যের সত্যতা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। সত্য-মিথ্যা পরের বিষয়। কিন্তু এতো তথ্য আগে জানা ছিল না অনেকেরই। তবে, কেঁচোর গর্তে টোকা দিয়ে সাপ-বেজিসুদ্ধ বেরিয়ে আসার দশা হয়েছে। জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এসব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। সত্য হয়ে থাকলে সিইসি এতোদিন কেন এগুলো বলেননি-এ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তবে, মাহবুব তালুকদার জবাব দিয়েছেন লাইন ধরে ধরে। বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অসুখের যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। চিকিৎসার কারণেই তিনি এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন। নির্বাচন বিষয়ে তার ভিন্নধর্মী অবস্থান বলতে গিয়ে সিইসি তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে চিকিৎসার মতো বিষয় টেনে আনার নিকৃষ্ট পথ বেছে নিয়েছেন।
তাকে রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বলে উল্লেখের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইচ্ছা করলেই কেউ আইসিইউ বা সিসিইউতে থাকতে পারে না। নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সময় থেকেই প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত জানিয়ে সিঙ্গাপুর ও ভারতের চেন্নাইতে চিকিৎসা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। নিজ খরচে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথাও জানান। সেইসঙ্গে এও জানান, বর্তমানে কর্মরত অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং অবসরপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার সকলেই প্রাপ্যতা ও বিধি অনুযায়ী কমিশন থেকে চিকিৎসার খরচ নিয়ে থাকেন। কে এম নুরুল হুদা নিজেও নির্বাচন কমিশন থেকে চিকিৎসার জন্য টাকা নিয়েছেন।
নুরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদারের এসব বাৎচিতের মধ্য দিয়ে মানুষের বাড়তি কিছু তথ্য জানা হয়েছে। আরো জানার ইচ্ছাও জাগছে। বিশেষ করে এই সাংবিধানিক ও বিশিষ্টজনদের চিকিৎসা, ফরেন ট্যুরসহ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা হাসিলের তথ্য।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন