তবিবর রহমান
বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবার দ্বার খুলছে যশোরে। এ জেলার মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মিত ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) থেকে মিলবে ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা। খুব কম মূল্যেই পাওয়া যাবে সর্বাধুনিক পরমাণু চিকিৎসা সেবা। আসছে জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে উদ্বোধন করে চিকিৎসা সেবা দিতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইনমাস যশোরের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. জামিউল হোসাইন বলেন, পরমাণু চিকিৎসা একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে ব্যবহৃত হয় পেট সিটি, স্পেক্ট সিটি, স্পেক্ট গামা ক্যামেরা ও বিভিন্ন ধরনের হরমোন অ্যানালাইসিস সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি। এ ছাড়াও কেন্দ্রগুলোতে অন্যান্য যন্ত্র, যেমন-অত্যাধুনিক আলট্রাসাউন্ড, কালার ডপলার, বিএমডি প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। এসব যন্ত্রপাতির সাহায্যে থাইরয়েড, ব্রেইন, বোন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোগ দ্রুত ও সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। ফলে ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা যথাসময়ে করা সম্ভব হয়। যমেক ক্যাম্পাসে ইনমাস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখন যশোরেই বিশ^মানের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।
জুনের পরে নবনির্মিত ইনমাস’র দ্বার খুলবে
ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা
সূত্র মতে, বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রটি স্থাপিত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ১৯৬১ সালে। এরপর বিভিন্ন সময় দেশে ১৪টি এধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন সর্বশেষ আরো ৮টি ইনমাস চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে একটি। ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ভবন নির্মাণের সময়কাল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য মেশিন ও যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে।
আরও পড়ুন:মজুরি বৃদ্ধির দাবি মেনে নেয়ায় কাজে ফিরলেন দর্জি শ্রমিকরা
সূত্র মতে, থাইরয়েড, ব্রেইন, বোন ক্যান্সার, কিডনি, লিভারের রোগে আক্রান্ত হলেই যশোরসহ আশপাশের জেলার মানুষ পাশের দেশ ভারতে যান। সামর্থবানরা সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকায়সহ অন্যান্য দেশে উড়াল দেন। কিন্তু যশোরের ইনমাস থেকেই একই ধরনের পরীক্ষা শেষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব। ইনমাস যখন উদ্বোধন হবে তখন এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ডেপুটি প্রকল্প পরিচালক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো গরীব ও সাধারণ মানুষকে কম খরচে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উন্নত সেবা দেয়া। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা খরচ নির্ধারণ করবেন সংশ্লিষ্টরা। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন টেস্ট এবং রিপোর্ট করা হবে সেটা নিঃসন্দেহে বিশ^মানের।
প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাবিবুল্লাহ বলেন, বর্তমানে দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ৮টি ইনমাস স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পে মেয়াদ আগামী জুন মাস পর্যন্ত। প্রতিটিতে ছয় তলা ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৬০৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এরমধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ২৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। প্রায় সব যন্ত্রপাতি দেশে চলে এসেছে। কিছু কিছু ইনমাস কেন্দ্রে পৌছে গেছে। সেগুলো স্থাপনের কাজ চলমান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনে উদ্বোধনের পর চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হবে।
ইনমাস যশোর সেন্টারের পরিচালক ডা. জামিউল হোসাইন বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যশোর। এখন যেসব রোগ নির্ণয়ের জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয় তখন যশোরেই সেগুলো পরীক্ষা করা যাবে।
তিনি বলেন, ইনমাসে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্ক্যান করা হয়। আমরা স্ক্যান করে বলে দিতে পারি, হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন ঠিক আছে কি না। থাইরয়েড গ্লান্ড কোনো কারণে রোগাক্রান্ত হলে, আমরা সেটা নির্ণয় করতে পারি। পেট সিটি স্ক্যান করে আমরা বলে দিতে পারি শরীরের কোথায় ক্যান্সার, কোন পর্যায়ে আছে। ক্যানসার চিকিৎসা দেওয়ার পর, চিকিৎসা কার্যকর হলো কিনা, সেটাও জানা যায়।
আরও পড়ুন:পোশাকের উচ্চ দামে ঈদ বাজারে হা-হুতাশ
১ Comment
Pingback: হাইকোর্টে প্রথম আলোর সম্পাদকের আগাম জামিন আবেদন