নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে প্রতিনিয়ত কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যরা। তাদের আশংকা ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে কিশোর সন্ত্রাসীরা। ঘটাচ্ছে হত্যাসহ চুরি-ছিনতাই। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষ ভীত। আসছে ঈদে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য তাদের দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের নির্মূল করতে প্রশাসনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে। একই সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তাদের নিয়ন্ত্রকদের। এসব কিশোর গ্যা’র সদস্যরা শহরের কোন না কোন রাজনৈতিক দলের নেতার অনুসারী।
জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভা” “ব্যবস্থা নিতে হবে নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে” “প্রশাসনের সঙ্গে রাজনীতিকদের ভূমিকা রাখার তাগিদ”
সোমবার জেলা প্রশসাকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির মাসিক সভায় কমিটির কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি সময়ে শহরে ঘটে যাওয়া ঘটনার উদাহরণ টেনে কিশোর গ্যাং নির্মূল করতে এই পরামর্শ দেন। সভায় এখনই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে হত্যাকাণ্ড, চুরি-ডাকাতির বড় ধরণের সহিংসতা কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে বলে বার্তাও দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। তিনিও এটি রুখতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদেরও একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসন্ন বাংলা নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উদযাপনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই দুটি উৎসব নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখরভাবে পালন করতে জেলা প্রশাসন সবধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অযথা যানজট বা অবৈধ পার্কিংকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার যশোর অঞ্চলের মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলোর অবস্থা অনেকটাই ভালো। দুই-এক জায়গায় সামান্য সমস্যা থাকলেও চলাচলের উপযোগী করার কাজ চলছে। এছাড়া ঈদের আগে-পরে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করা হবে। মানুষের ঈদযাত্রা ও ঈদ উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এটা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘সবার প্রচেষ্টায় ঈদ আর পহেলা বৈশাখ সুন্দরভাবে উদযাপন করবে যশোরবাসী।
আরও পড়ুন:‘মৃত’ ব্যক্তিকে জীবিত গ্রেপ্তার করল যশোর পিবিআই
ঈদ বাজারে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়োজিত থাকছেন। ঈদ উৎসবের আগেও পরে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে দুর্ঘটনা রোধে ঈদের দুদিন আগে ও পরে যশোর অঞ্চলে গাড়ি চলাচল সীমিত রাখা হবে। সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা ও মোড় নিয়মিত মনিটরিং ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া সম্প্রতি সময়ে আন্তর্জাতিক ট্রেন বন্ধন ট্রেনে চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মাসের দুটি অভিযান বিপুল পরিমাণ মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এটি বন্ধ করতে বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব এবং শার্শা নির্বাহী অফিসারকে কার্যত ভূমিকা রাখতে নির্দেশ নেওয়া হয়। সভায় জানানো হয়, যশোরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। গত মার্চ মাসে জেলাটিতে মামলা ছিলো ২৯৮টি। ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ৩৩২টি। আইনশৃঙ্খলা আরো উন্নতি করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান যশোরের জেলা প্রশাসক।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। এই জেলায় ছুরির ব্যবহার হয় অনেক বেশি। এটি বন্ধ করতে আমরা এই ছুরির উৎসগুলো যেমন অনলাইন ও শহরের দোকানগুলোকে অভিযান পরিচালনা করছি। তাছাড়া এই শহরের কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি জানান, আসন্ন বাংলা নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাইবার প্রেট্টোলিং করা হচ্ছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা দেখছি না। নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎসব করতে জনসাধারণকে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেন তিনি।
সভায় বক্তব্য রাখেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অমল কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মাসুদ উল আলম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:যুবলীগের হাতে ইউপি চেয়ারম্যান লাঞ্চিত, প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশে প্রশাসনের বাঁধা
১ Comment
Pingback: যশোরে যুবলীগ নেতা বিপুলের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত