এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্ন
নির্ঘুম রাত কাটছে নারী-শিশু-বৃদ্ধদের
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই
রেজওয়ান বাপ্পী
যশোরে বয়ে চলেছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এরমধ্যে রাতে ও দিনে তীব্র লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি জনজীবনে বাড়তি যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ৩০ জুন থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরাঞ্চলে লোডশেডিং মোটামুটি সহনীয় হলেও গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তি পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা চরম কষ্টে দিন পার করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
যশোর সদর উপজেলার মুরাদগর গ্রামের গৃহবধূ সুফিয়া বেগম বলেন, বিদ্যুতের ভোগান্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না। এক ঘণ্টা থাকছে তো আরেক ঘণ্টা থাকছে না। বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি। পাঁচবাড়িয়া গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, বিদ্যুৎ সারাদিন আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। তবে বাড়ির সামনে মাঠ থাকায় বাতাসের কারণে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে। ফেসবুক গ্রুপ ‘যশোর কমিউনিটিতে’ আহাদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘পঁচা গরমে চরম লোডশেডিং। যশোর শহরে কোন এলাকায় কেমন লোডশেডিং হচ্ছে?’ ডালমিল তেঁতুলতলা এলাকায় ঠিক রাত ১২টায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হয় আসে ১টা ২৫ মিনিটে। দুপুর ২টায় অফ হয়ে আসে ৩টার পরে বলেও জানান তিনি।
কমেন্টবক্সে শাকিল বাবু জানান, দোগাছিয়া গ্রামে সকাল ১১টার সময় বিদ্যুৎ গিয়ে এসেছে বিকেল ৫টার দিকে।
মুজাহিদুল আলম বলেন, শার্শার বাগআঁচড়া পল্লী বিদ্যুতের আওতায় আমার গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুতের অভাবে আমার মা ছটফট করছে।
পোস্টে বিএম নাহিদ হাসান নামে একজন কমেন্ট করেন। তিনি জানান, ঝিকরগাছার মাগুরা এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না।
ঝিকরগাছা কাটাখাল এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, রাত-দিন মিলে অন্তত ছয় থেকে আটবার লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার এক ঘণ্টা পর আসছে।
ঝিকরগাছা রঘুনাথনগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব বলেন, আমাদের এখানে বিদ্যুৎ মোটেও থাকছে না। এদিকে কলেজে একাদশ শ্রেণির ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট পাচ্ছে। আবার ৩০ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। বিদ্যুতের এ অবস্থা থাকলে ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফসানা বন্যা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে চার্জার লাইট অথবা অন্য সামান্য আলোতে পড়তে হচ্ছে। এতে চোখের উপর খুব চাপ পড়ছে।
অপর পরীক্ষার্থী তানিয়া আফরোজ বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ অতিথির মতো যায় আর আসে। রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক ঘণ্টার বেশি সময় পরে আসে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ফলাফল ভালো নাও হতে পারে।
শার্শা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা সুলতানা সালমা জানান, বেনাপোল এলাকায় নিয়মিত দিনে পাঁচ থেকে সাতবার বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। এর চেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে গ্রামগঞ্জে। নাভারণ বিদ্যুৎ অফিস আওতাধীন করিমালী গ্রামের গ্রাহক ও নাভারণ বাজারের বীজ ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান জানান, রাতে বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার সঠিক কোনো হিসাব নেই। আধা থেকে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ স্থায়ী থাকে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মিনারুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং এ সাধারণ জীবনযাপন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো বসতে পারছি না। নাভারণ বিদ্যুৎ অফিসে দায়িত্বরত শিবলু মুন্সি জানান, দেশের কোনো এক এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পাওয়ার গ্রিড বন্ধ হওয়াতে লোডশেডিংয়ের এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে অচিরেই এ সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ইছাহাক আলী জানান, গ্রাহকদের চাহিদা ১৫০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ মেগাওয়াট। সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়টি সরকার অবগত আছে। হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।