সেলিম আহম্মেদ, বাগআঁচড়া
যশোরের শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদীতে একে একে ভেসে উঠলো তিন যুবকের মরদেহ। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে উপজেলার পাঁচভুলাট ও পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে দুটি ও একটি মরদেহ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ।
নিহতরা হলেন, বেনাপোল পোর্ট থানাধীন দিঘীরপাড় গ্রামের মৃত আরিফ হোসেনের ছেলে সাবু হোসেন (৩৫), কাগজপুর গ্রামের মৃত ইউনুচ আলী মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গীর (৩৬) ও উপজেলার সাহাজাদপুর গ্রামের জামিল ঢালীর ছেলে সাকিবুল হাসান (২০)।
এলাকাবাসীর দাবি, নিহতরা ওপারে গরু আনতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) হত্যা করে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে রেখে গেছে।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা ব্যাটালিয়ন (২১ বিজিবি) এর পাঁচভুলাট ইছামতি নদীর পাড়ে ভান্ডারির মোড় নামক স্থানে একটি লাশ উলঙ্গ অবস্থায় বাংলাদেশের সীমান্তে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে শার্শা থানা পুলিশ বিজিবির উপস্থিতিতে লাশ নদী তীর থেকে উদ্ধার করে। লাশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের পরিবার জানিয়েছে, তিনি গতরাতে চোরাচালানের উদ্দেশে ভারত সীমান্তে গমন করেন।
একইদিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন দিঘীরপাড় গ্রামের মৃত আরিফ হোসেনের ছেলে সাবু হোসেন উপজেলার পুটখালী ইউনিয়নে ইছামতি নদী সাঁতার দিয়ে গরু পারাপারের জন্য সীমান্তে গেলে ভারতীয় বিএসএফের হাতে আটক হন। বিএসএফ তাকে মারধর করে বস্ত্রবিহীন অবস্থায় বাংলাদেশে সীমান্তে রেখে চলে যায়। ভিকটিম নিজে আহত অবস্থায় নাসিরের আমবাগানে আসলে স্থানীয় লোকজন তার বাড়িতে ফোন করে খবর দিলে তার মা এবং স্ত্রী গিয়ে তাকে ভোর ৪টার দিকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাবু। পরে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
এদিকে একই দিন বিকেল ৩টার দিকে একই গ্রামের কাদেরের মোড়ের নিচে চাঁদআলীর বাঁশবাগানের সামনে ইছামতী নদীর পাড়ে আরো একটি উলঙ্গ লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও বিজিবির একটি টিম এসে লাশটি উদ্ধার করে।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) নিশাত আল নাহিয়ান এসব ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, কিভাবে তাদের মৃত্যু হলো আমরা তদন্ত করছি। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে হয়তো মৃত্যুর কারণ জানাতে পারবো বলে তিনি জানান।
এদিকে, তিনজন নিহতের বিষয়ে বিজিবি ও পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের পিটুনিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
বিজিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বিএসএফের কাছে তাঁরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। বিএসএফের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে সীমান্তের ইছামতী নদীতে একজনের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন খুলনা ব্যাটালিয়নের (২১ বিজিবি) সদস্যদের খবর দেন। বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে বেওয়ারিশ অবস্থায় শার্শা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। লাশের মাথার পেছনের অংশে জখমের চিহ্ন আছে।
এ বিষয়ে বিএসএফ এর কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে খুলনা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল মো. খুরশিদ আনোয়ার বলেন, ‘একজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে জানতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।’