নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজের ভিটেমাটি বলে কিছু নেই আব্দুর রাজ্জাকের। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে বসবাস করে আসছিলেন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার সিঙ্গিয়া রেলওয়ে স্টেশনের পাশে নদীর ধারে বস্তিতে। জীবন জীবিকার তাগিদে স্ত্রী-সন্তান সাথে নিয়ে তৈরি করছিলেন মুড়ি মোয়া। বৃদ্ধ আব্দুর রাজ্জাক ওই মোয়া ফেরি করে দোকানে দোকানে গিয়ে বিক্রি করে পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সিঙ্গিয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রিয়াদ এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, প্রায় এক যুগ আগে ইয়াহিয়া নামে এক ব্যক্তির দখলকৃত সিঙ্গিয়া রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশে আট শতক জমি ২৯ হাজার টাকায় কিনে নেয়। সেখানে দোচালা টিনের ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি ওই ঘরেই ঝুরি ভাজা, চানাচুর তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে ফেরি করে বিক্রি করে আসছেন।
সম্প্রতি শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক সেখানে মুড়ি ও চিড়ের মোয়া তৈরি করছেন। সপ্তাহ খানেক আগে সিঙ্গিয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রিয়াদ হাসান ওই বাড়িতে যান। এসময় আব্দুর রাজ্জাককে সেখানে মোয়া তৈরী করতে নিষেধ করেন। মোয়া তৈরিতে নিষেধের কথা জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার তার কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তৈরি করা মুড়ির মোয়া বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন তার আয় পাঁচ থেকে ছয়শত টাকা। কিন্তু ১৫ হাজার দাবি করায় তিনি নিরুপায় হয়ে মাস্টারকে তিন হাজার টাকা দিতে রাজি হন।
টাকার অংক কম হওয়ায় মাস্টার ওই জমি থেকে আব্দুর রাজ্জাককে উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে চলে যান। তিনদিন পরে আবার সেখানে খায়রুল ইসলাম ও আক্তার হোসেন নামে স্টেশনের দুই কর্মচারিকে আব্দুর রাজ্জাকের কাছে দেনদরবার করতে পাঠানো হয়। ওই দুইজনের দেনদরবারে আব্দুর রাজ্জাক টাকা না দেয়ায় তাকে স্টেশনে ডেকে আনেন মাস্টার। সেখানেও একই ধরণের কথা বলার কারণে আব্দুর রাজ্জাক এখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন।
অবশ্য আব্দুর রাজ্জাকের কাছে টাকা দাবির ব্যাপারে স্টেশন মাস্টার রিয়াদ হাসান বলেছেন, রেলওয়ের সরকারি জায়গায় অবৈধ ভাবে ঘর করে বসবাস করছেন। আবার মুড়ির মোয়া তৈরী করে বিক্রি করছেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আব্দুর রাজ্জাককে সেখানে মোয়া তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক স্টেশন মাস্টারের কথা না শোনায় যশোরস্থ রেলওয়ের আমিন আব্দুল মতিনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
যশোরস্থ রেলওয়ের আমিন আব্দুল মতিন বলেছেন, রেলওয়ের অনেক সম্পত্তি অবৈধ দখলে রয়েছে। একজন আব্দুর রাজ্জাক মুড়ির মোয়া তৈরি করে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করলে কোন সমস্যা হয়না। তবে বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: যশোরে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা