নিজস্ব প্রতিবেদক: তামান্না আক্তার নুরাকে মেডিক্যাল টিমের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা তামান্নার বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তারা তামান্নাকে হেঁটে চলায় সক্ষম করে তুলতে কোনোভাবে সহযোগিতা করা যায় কিনা সে ব্যবস্থা করতে বলেছেন। তামান্নার জন্য কতটুকু কী করা যাবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বলা যাবে।’
শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই পা দিয়ে লিখে একের পর এক কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জন করা যশোরের তামান্না আক্তার নূরা শারীরিক প্রতিবন্ধিতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। এই অদম্য মেধাবীর দেহে কৃত্রিম দুটি হাত ও একটি পা সংযোজনের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে মেডিকেল টিম।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল টিমের তত্ত্বাবধানে তামান্নাকে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সম্ভব হলে তার দেহে কৃত্রিম একটি পা ও দুটি হাত সংযোজন করা হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মেডিকেল টিমের চিকিৎসকরা।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তামান্না গতকাল যশোর থেকে এখানে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা দুজনই তামান্না বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তামান্নাকে হেঁটে চলায় সক্ষম করে তুলতে কোনোভাবে সহযোগিতা করা যায় কিনা সে ব্যবস্থা করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী আমি তামান্নার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
‘তামান্নার বাবা-মা তাকে গতকাল ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তামান্নার জন্য কতটুকু করা যাবে কি যাবে না তা এই মুহূর্তে আমরা কিছুই বলতে পারবো না। আমরা আজ ওকে ভর্তি করছি। আগামীকাল কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। তারপর আমরা বলতে পারব তার চিকিৎসা ব্যবস্থা কী হবে।’
অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আর আর কৌরি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রথমে এক্স-রে করে দেখতে চাই তামান্নার যে পাটি ভালো আছে সেটির বোন জয়েন্ট ঠিক আছে কিনা। সে একটি পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারলে আমরা অন্য পায়ে আর্টিফিসিয়াল লিম্ব (কৃত্রিম পা) লাগাব।
‘বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা দেখব যে পা সচল আছে সেটিতে সে কতটুকু শক্তি পায়। পায়ের মাসলগুলো ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। কারণ তামান্নার ওই পা বহুদিন ব্যবহার করা হয়নি। পা সচল থাকলে আরেকটি আর্টিফিসিয়াল লিম্ব জুড়ে দিলে সে দাঁড়ানোর ব্যালেন্স পাবে। একইভাবে হাতের ক্ষেত্রেও আমরা পরীক্ষা করব। যদি হাতের হাড়ের জয়েন্টগুলো ভাল থাকে তাহলে কৃত্রিম দুটি হাত আমরা সংযুক্ত করতে পারব। তাহলে কৃত্রিম এই দুই হাত দিয়ে তামান্না মোটামুটি কাজ চালাতে পারবে।’
জন্ম থেকেই দুই হাত ও এক পা না থাকলেও তামান্না আক্তার নুরার লেখাপড়ার পথে তা বড় বাধা হতে পারেনি। জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফল করার পর এইচিএসসিতেও তিনি জিপিএ ৫ ফল অর্জন করেন।
এই অদম্য মেধাবীকে নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। সরকারপ্রধান তামান্নাকে টেলিফোন করে তার সার্বিক খোঁজখবর নেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
এরপর বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও টেলিফোনে তামান্নার সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সাহস দেন।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ফোন করে শিক্ষা গ্রহণে যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তার আশ্বাস দেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদও ফোন করে তামান্নার সার্বিক খোঁজখবর নেন।
মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় কলেজছাত্র খুন
মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় রাজু বিশ্বাস (২৫) নামে এক কলেজছাত্র খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সকালে রাজুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত রাজু ওই গ্রামের আক্তার বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, শ্রীপুর উপজেলার তখলপুর হাতেম আলী দাখিল মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে তখলপুর গ্রামের মকবুল মেম্বার (বর্তমান) ও সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় মকবুল মেম্বারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। পরে উভয়পক্ষের সমর্থকরা বাড়িঘর ভাঙচুর চালায়। এর জের ধরে সোমবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হামলায় মারাত্মক আহত হন রাজু বিশ্বাস (২২)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত রাজুর বাবা ও মকবুল মেম্বারের সমর্থক আক্তার বিশ্বাস বলেন, ‘সন্ধ্যায় দলীয় লোকজনের সঙ্গে আমার বাড়ির সামনে বসেছিলাম। এ সময় বিরোধীপক্ষের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করলে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে যাই। এ সময় আমার ছেলে ঠেকাতে গেলে তারা তাকে কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাচিলাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অবস্থায় খারাপ দেখা গেলে দৌলতদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানে সে মারা যায়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুকদেব রায় জাগো নিউজকে বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।