শাহারুল ইসলাম ফারদিন
কদিন আগে ছিল তীব্র শীত। এখন শীত কমেছে। শীতের পোশাক পরে থাকলে মাঝে মধ্যে গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়ার এই বিরূপ আচরণে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীত জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সীরা। তবে এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘুরে সেই তথ্য মিলেছে। হাসপাতালে প্রতিদিনই ৩০/৩৫ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।
বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় আউটডোর ও জরুরি বিভাগে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই শীতজনিত কারণে। গত ৭ দিনে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৪১৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমান শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৯৬ জন শিশু। যার মধ্যে ৩৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ওয়ার্ডের ২৭টি শয্যার সব কটিই পূর্ণ। তাই মেঝেতে বেড করে তাদের থাকতে দেয়া হয়েছে। বেশির ভাগ রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। আবার শিশুদের শ^াসকষ্টজনিত ও নিউমোনিয়া রোগে ব্যবহৃত নেবুলাইজার মেশিন মাত্র একটি। একটি মেশিন থাকায় সব সময় সিরিয়াল থাকছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অবস্থাও একই। বর্তমানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ২৭ জন। এরমধ্যে দুইজন বয়স্ক; অন্যরা শিশু। বর্তমানে হাসপাতালের কোনো বেড খালি নেই। এ ঠান্ডায় রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরার পান্থপাড়ার ১৮দিনের শিশু আব্দুল্লাহকে। গত কয়েকদিন যশোর শিশু হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে উন্নতি না হওয়ায় তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহরতলীর খয়েরতলা এলাকা থেকে আসা তিনমাস বয়সি জান্নাতুলের মা আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, গত পরশু মেয়েটার ঠান্ডার সাথে ডায়রিয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে দুই দিন আমদানি-রফতানি বন্ধ
স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়ানোর পরও কোন উন্নতি না হওয়ায় গতকাল হাসপাতালের আউটডোরে নিয়ে আসলে চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। একইভাবে মণিরামপুরের মাছনা গ্রামের দেড় মাস বয়সি অরুন দাসের বাবা কার্তিক দাস ও ১৫ মাস বয়সী সালামতপুরের আল-জামিরের মা জেসমিন নাহারসহ বেশ কয়েকজন জানান, তাদের শিশুরা জ¦র, ঠান্ডা, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। গত কয়েকদিন বিভিন্ন ডাক্তারকে দেখিয়েছি। উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে নেবুলাইজার মেশিন মাত্র একটি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক জসীম উদ্দিন জানান, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ভাইরাসজনিত রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু কোনো অবস্থায় যেন ভেজা না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে তারা কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইমদাদুল হক রাজু জানান, শীতে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে কাশি, অ্যাজমা, জ্বর, অ্যালার্জি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় শিশুরা। এ সময়ে বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকের অ্যালার্জি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এসব রোগ-বালাই থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সচেতনতা ও সাবধানে থাকা।
হাসপাতালের তত্ত্ব¡াধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে শিশু ও নবজাতক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতে কোল্ড ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে তারা হাসপাতালে আসছেন। শীতকালে তাপমাত্রা ওঠানামা করে। এ আবহাওয়া শরীরের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না শিশুরা। যার ফলে তারা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।
আরও পড়ুন: কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ৭ মাসে ৬ বার ভারতে অবস্থান তপনের