নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের গ্রাহকরা ইসলামী ধারার তিনটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। নানা অনিয়মের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাবার ঘটনা জানাজানি হবার পর আতংকে গ্রাহকরা তাদের গচ্ছিত অর্থ তুলে নিচ্ছে। যেকারণে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সংকটে পড়েছে।
সম্প্রতি ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র। সব মিলিয়ে নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা।
একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে এ কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলারসংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।
শহরের আরএন রোডের রানা হাসান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার ব্যবসায়ীক লেনদেন হতো ইসলামী ব্যাংকের সাথে। সম্প্রতি ব্যাংকটি থেকে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুপাট করা হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়েছে। যেকারণে ওই ব্যাংকের সাথে লেনদেন চুকিয়ে ফেলেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিসক জানান, ইসলামী ব্যাংক ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এখন শুনছি তারা টাকার সংকটে রয়েছে। যেকারণে আমি সম্প্রতি ২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছি। এই টাকা আমার ও স্ত্রীর নামে ছিল। আমার স্ত্রীও একজন সরকারি চিকিৎসক। শুধু ওই দুই গ্রাহক নন, বেশিরভাগ গ্রাহক ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে তাদের রাখা টাকা তুলে নিতে শুরু করেছে। আর এতে নগদ টাকার সংকটে পড়েছে এসব ব্যাংক।
যদিও এসব সাময়িক বলে মনে করছেন ইসলামী ব্যাংক যশোর জোনাল প্রধান শফিউল আজম। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন গ্রাহকরা টাকা তুলে নিয়ে গেলেও এখন আবার তারাই টাকা রাখছেন। এটা গুজব। আমাদের ব্যাংকে কোন সমস্যা নেই। গ্রাহকরা নিরাপদে টাকা রাখতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের ঋণ ৩-৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। তারা আমাদের বেশ পুরোনো গ্রাহক। ইসলামী ব্যাংকে কোনো উল্টাপাল্টা কাজ হয় না। যা হচ্ছে, সবই নিয়ম মেনে হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংক একসময় ছিল দেশের ভালো ব্যাংকগুলোর একটি। ভালো শিল্প গ্রুপগুলো ছিল ব্যাংকটির গ্রাহক। মালিকানা পরিবর্তনের সাত বছরের মাথায় ভালো গ্রুপগুলো ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আর শীর্ষ গ্রাহক হিসেবে যুক্ত হয়েছে স্বল্প খ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠান।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক শেখ নিয়াজ হাসান বলেন, অনেকে গুজবে ভয় পেয়ে টাকা নিতে শুরু করেছিল। সেই অবস্থা এখন আর নেই। তবে আমাদের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকে বেশি টাকা তুলছে বলে জেনেছি।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক মাজহারুল ইসলাম জানান, আমাদের ব্যাংকে এমনিতে গ্রাহক কম। আমাদের এখানে কোন সমস্যা নেই।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, গ্রাহকরা সব সময় চাই তাদের আস্থা। আস্থা হারালে গ্রাহক আর সেই ব্যাংকে টাকা রাখবেনা এটাই স্বাভাবিক। তবে যেসব ব্যাংকে এই সমস্যা হচ্ছে তাদেরকে উদ্যোগী হয়ে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকগুলো যে ব্যবসায় ঋণ দিয়েছে, তা যথাযথ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থনীতি সংকটের সময় এমন বড় অনিয়ম হলে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না।