এস এম মিজানুর রহমান, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় ও বহিরাগত বালু ব্যবসায়ীরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এভাবে উত্তোলনকৃত বালু বেশ কিছু জায়গায় মজুদের পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদার ও ব্যক্তির চাহিদামতো সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন এভাবে বালু উত্তোলন চললেও কেউ টু- শব্দটি পর্যন্ত করছে না। বারবার ভাঙনের মুখে পড়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন, এমনকি পাউবোর সংশ্লিষ্টরা পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে নীরবতা পালন করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। দুর্যোগপ্রবণ অংশ থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। নদী তীরবর্তী বিড়ালাক্ষী, পাখিমারায় মাঝ নদীতে একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত শ্রমিকরা বলেন, উত্তোলনসহ নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছে দিতে দূরত্ব ভেদে বালু ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতি ফুট চার থেকে ছয় টাকা দিচ্ছে। পরে ওই বালু ফুটপ্রতি আট থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি করছে। বালু ব্যবসায়ীদের দেখিয়ে দেয়া অংশ থেকে তারা বালু উঠিয়ে দিচ্ছে। নদীর বাঁধ ভাঙনকবলিত এলাকা হওয়ায় মানুষের দৃষ্টি এড়াতে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করছে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় তহশিল অফিস, ঊর্ধ্বতন প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা অজ্ঞাত কারণে চুপ থাকায় মাসের পর মাস তারা বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কারও নাম কেউ মুখে আনতে চায় না। বিড়ালাক্ষী গ্রামের একাধিক লোক জানান, গত এক যুগে অন্তত আটবার তাদের বেড়িবাঁধ ভেঙে চিংড়ি চাষের ঘের ¬প্লাবিত হয়েছে। নওয়াবেকীর ফারুক এবং রবিউল খোকন উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত।
বালু উত্তোলনের কাজের সঙ্গে জড়িত রবিউল খোকন বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে দূরের বালুমহালের অনুমতি থাকলেও যত্রতত্র বোরিং করে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আর কোন কথার উত্তর দেননি ।
সাতক্ষীরার আশাশুনির চর বালুমহাল ঘোষণা সত্ত্বেও বেশি মুনাফার লোভে প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভাঙন কবলিত খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।
পরিবেশ কর্মী শামিমা জামান জানান, নদী ভাঙনের ফলে প্রতি বছর শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকার অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। তারপরও নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি উপকূল রক্ষা বাঁধ কোনোভাবেই টিকবে না।
শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহীদুল্লাহ বলেন, নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করা আমাদেরকে কেউ জানালে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবো।