জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোরে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কৃষকের পকেট কাটছে ডিলার ও সাব-ডিলারসহ খুচরা বিক্রেতারা। প্রকার ভেদে কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে চাষিদের। বিশেষ করে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ইউরিয়া ও ডিএপি সার কিনতেই গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ এখনো বোরো মৌসুম শুরু হয়নি। সার লাগছে সবজি চাষে। বোরো মৌসুম প্রায় সমাগত। বোরোর ভরা মৌসুমে সার সিন্ডিকেট কি করবে, তা ভাবলে মাথায় কাজ করছে না। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও চড়া দামে বিক্রির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুড়ামনকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ দফাদার। ডিসি অফিসের মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করবেন বলেও জানান স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সার বিক্রেতারা। তাদের দাবি সারের সংকট নেই। দামও বেশি নেয়া হচ্ছে না।
শনিবার সরেজমিনে যাওয়া হয় চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক মাহবুব রহমান, মফিজুর রহমান ও আহমদ আলী অভিযোগে বলেন, সার কিনতে গেলে বলা হয় নেই। কখনো ২০ কেজি সার চাইলে বলা হয় ৫ কেজি নিয়ে যাও। সার পাচ্ছি না, সরবরাহ নেই। এসব অভিযোগ সাব-ডিলার রাজন আলী ও আব্দুল মালেকসহ অনন্ত ২০ জন খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ-সরকার নির্ধারিত ২২ টাকার ইউরিয়া ২৪ থেকে ২৫ টাকা, ২২ টাকার টিএসপি ৩০ টাকা ও ১৫ টাকার পটাশ ২২ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। তাও চাহিদা মতো সার পাচ্ছি না। সরকারি তদারকি নেই বলেও অভিযোগ এসব কৃষকের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক কৃষক বলেন, সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে লাভ নেই। পত্রিকায় সংবাদ বের হলে নানামুখী চাপ আসে। জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ওরা টাকাওয়ালা (সার বিক্রেতারা) দাবি করে তিনি বলেন, তাদের পোষ্য মাস্তান-গুন্ডা রয়েছে।
চুড়ামনকাটির কৃষক আব্দুস সালাম, বাগডাঙ্গা গ্রামের হায়দার আলী, কমলাপুর গ্রামের তৈয়ব আলী, গোবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান অভিযোগে বলেন, সার সংকট লেগেই আছে। কখনোই প্রয়োজনীয় সার পাওয়া যায় না। প্রথমে বলা হয় সার নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে চড়াদাম দিয়ে সার কিনতে হয়।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ দফাদার বলেন, সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু আমার ইউনিয়নের কৃষকরা চাহিদা মতো এবং সরকার নির্ধারিত দামে সার পায় না। তিনি বলেন, এক ওয়ার্ডে দু’জন সাব-ডিলার নিয়োগের বিধান নেই। খুব প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র লাগে। কিন্তু আমবটতলায় সফিয়ার রহমান ও তার ছেলে শাহিনুর রহমানের ক্ষেত্রে আইন উপেক্ষিত হয়েছে। নওয়াপাড়া ট্রেডার্সের সার উত্তোলন করেন সামছুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। একই ওয়ার্ডে ৩ সাব-ডিলার এক গুদামে সার মজুত করে ইচ্ছে মতো চড়াদামে বিক্রি করেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের সাথে আমার বাক-বিতণ্ডাও হয়েছে উল্লেখ করে এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করবো। সেখানে কাজ না হলে উপরিমহলকে জানাবো-বলেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে বারীনগর বাজারের সাব-ডিলার রাজন ও আব্দুল মালেক বলেন, সারের সংকট নেই। দামও বেশি নেয়া হচ্ছে না। যত খুশি তত নিতে পারেন বলেও মন্তব্য তারা। বিএডিসির ডিলার স্বপন দেবনাথ বলেন, প্রচুর বাকি চলে গেছে। এসব টাকা চাওয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়। অভিযোগ ছড়িয়ে সম্মানহানির চেষ্টা করা হয়।
এ বিষয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। গত ১৪ আগস্ট চৌগাছা উপজেলায় অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস। এ সময় বিসিআইসি’র ডিলার রাণী এন্টারপ্রাইজ ও দীপু এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানে সার মজুদ ও বেশি দামে সার বিক্রির অপরাধে প্রথমজনকে ২০ হাজার ও দ্বিতীয়জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আরও পড়ুন: সীমাহীন কষ্টে ১১২ ঘরের বাসিন্দা