অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: শিল্পশহর নওয়াপাড়ায় অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ এনে ধান ব্যবসায়ীরা ধান বেচাকেনা বন্ধ রেখে গত চারদিন ধরে ধর্মঘট চলছে। ধান বেঁচাকেনা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ কৃষক। ধান বেঁচতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে কৃষক। গত শনিবার থেকে নওয়াপাড়ায় ধান ব্যবসায়ীরা ধান না কেনার ঘোষণা দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ধানহাটা ঘুরে আড়ৎ বন্ধ দেখা গেছে। কৃষকেরা ধান নামিয়ে আড়তের সামনে বসে আছেন। কোন ক্রেতা নেই। উপজেলার রামসরা গ্রামের কৃষক সুকান্ত মল্লিক ধান বিক্রি করতে একঘন্টা অপেক্ষা করে ধান নিয়ে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছয় মণ ধান এনেছিলাম। ধান বিক্রি করে জন কিষেনের টাকা দেবো, বাজার করব কিন্তু কেনাবেচা বন্ধ। হাটে ধান বিক্রি করতে না পেরে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ মধ্যপুর গ্রামের প্রদীপ পাল দশমণ ধান এনেছিলেন এ হাটে। বিক্রি করতে না পেরে তিনিও ধান নিয়ে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘নদীপার করে ধান এনে বিক্রি করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছি। এতে ভ্যানভাড়া ও নদীপারাপারের খরচ দিয়ে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হলাম।’
অভয়নগর উপজেলার সদরে অবস্থিত নওয়াপাড়া ধানহাটা। এ হাটে প্রায় ৩০ জন ধান ব্যবসায়ী রয়েছেন। নওয়াপাড়া পৌরসভা প্রতি বছর এই ধান হাট টি ইজারা দিয়ে থাকেন। চলতি বছরে হাবিব স্টোরের লাইসেন্স ব্যবহার করে হাটটির ইজারা পেয়েছেন খন্দকার ইমরান হোসেন।
বোরো মৌসুমে এখানে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন হাটে ৮ থেকে ৯ হাজার মণ ধান কেনা বেচা হয় বলে জানা গেছে।
নওয়াপাড়া বাজার আড়ৎ ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন গাজী বলেন, অতিরিক্ত খাজনা দাবি করায় আমরা শনিবার থেকে ধান কেনা বন্ধ রেখেছি। প্রতি কুইন্টাল ধানে কৃষকদের ১২ টাকা দিতে হবে আর দোকানদারদের প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিতে হবে এরুপ সাইনবোর্ড দেখে কৃষকরা ধান বিক্রিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অতিরিক্ত খাজনা কমিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে গতকাল সকল আড়ৎদার স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে মিটিং করেছি। অতিরিক্ত খাজনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে ইজারাদার ইমরান খন্দকার বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা খাজনা না দেয়ার অজুহাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কৃষকদের বিপাকে ফেলার জন্য ধান বেঁচাকেনা বন্ধ রেখেছে। সমিতির সভাপতি সম্পাদক মিটিং করে আড়তদারদেও ধান কিনতে নিষেধ করেছে। আড়ৎদাররা অতিরিক্ত খাজনা নেয়ার অভিযোগ করছেন কিন্তু আমিতো এ পর্যন্ত একটি টাকাও তুলতে পারলাম না। তাহলে অতিরিক্ত খাজনার প্রশ্ন কেন আসছে? এতে আমি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি তেমনি কৃষকরাও ধান বিক্রি করতে না পেরে কান্নাকাটি করে ফিরে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল বিশ্ববাস বলেন বিশ বছর ধরে আমরা হাটটি কিনে ব্যবসা করছি। এ বছর আমাদের বাইরে একজনকে হাটটি দেয়া হয়েছে। খাজনার পরিমাণ খুব বেশি। এত টাকা খাজনা দিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। তাই ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। আমি মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।