বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ মেটাভার্স বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করবে। ভবিষ্যতে মেটাভার্স কোন পথে যাবে, তার দিকনির্দেশনার বছর হয়ে উঠবে ২০২৩। এর বাইরে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) ও ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর) প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। তবে মেটাভার্সের দুনিয়ায় আগামী বছর একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ কেমন হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ইতিমধ্যে মাইক্রোসফট ও এনভিডিয়া একসঙ্গে মেটাভার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ শুরু করেছে। তাই আশা করা যায়, নতুন বছরে আমরা আরও উন্নত অ্যাভাটার প্রযুক্তি দেখতে পাব। বাস্তব দুনিয়ায় আমরা দেখতে যেমন, ভার্চ্যুয়ালি ঠিক তেমন করে আমাদের অ্যাভাটার গড়ার জন্য নানা প্রযুক্তি চলে আসবে।
ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল দুনিয়ার যোগসূত্র
আমরা ইতিমধ্যে বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে ডিজিটাল দুনিয়ার যোগসূত্র সৃষ্টির বিষয়টি লক্ষ করছি। ২০২৩ সালেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এ যোগসূত্রের দুটি উপাদান হচ্ছে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ও থ্রিডি প্রিন্টিং। ডিজিটাল টুইন হলো বাস্তব পণ্যগুলোর ভার্চ্যুয়াল সিমুলেশন বা ভার্চ্যুয়াল গঠন, যা নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশে নতুন ধারণা পরীক্ষা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নকশাকারী এবং প্রকৌশলীরা ভার্চ্যুয়াল জগতের অভ্যন্তরে বাস্তব বস্তু পুনরায় তৈরি করতে ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এরপর তা থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে প্রিন্ট করছেন। এতে বাস্তব জীবনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ কমে আসবে। এ বছর বিভিন্ন কারখানা, যন্ত্রপাতি, গাড়ি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতে এর ব্যবহার দেখা যাবে।
সবুজ প্রযুক্তিতে অগ্রগতি
এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো, আমাদের কার্বন নিঃসরণ কমানো, যাতে আমরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে পারি। ২০২৩ সালে সবুজ জ্বালানির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি খাতে অগ্রগতি হবে। এ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
ইউরোপের শেল ও আরডব্লিউই নামের দুটি প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পাইপলাইন স্থাপন করছে। এ ছাড়া বিকেন্দ্রীকরণ জ্বালানি গ্রিডের দিকেও এগোবে বিশ্ব।
রোবট আরও মানবসদৃশ হবে
২০২৩ সালে রোবট আরও বেশি মানবসদৃশ হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে চেহারা ও দক্ষতায় কিছু রোবট মানুষের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। এ ধরনের রোবটগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি অভ্যর্থনায়, পানশালা বা বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গী হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়্যারহাউস ও কারখানায় বিভিন্ন জটিল কাজ করবে রোবট। সাধারণত মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ও একঘেয়ে কাজগুলো এ ধরনের রোবট সমাধান করবে।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে টেসলা এআই দিবসে ইলন মাস্ক দুটি অপটিমাস হিউম্যানয়েড রোবট প্রোটোটাইপ দেখিয়ে বলেন, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তাঁরা রোবটের ফরমাশ নিতে শুরু করবেন। এ ধরনের রোবট বিভিন্ন বস্তু তোলা, গাছে পানি দেওয়ার মতো ঘরের নানা কাজ করতে পারবে।
কোয়ান্টামের অগ্রগতি ও বিপদ বাড়বে
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুবই শক্তিশালী, যা আজকের দিনের কম্পিউটারের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবে। অর্থাৎ এটি দ্রুত অনেক বেশি তথ্য প্রসেস করতে পারবে। এর এলগরিদম, কাঠামো্ব—কিছুই সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এসব কম্পিউটার অত্যন্ত জটিল সমস্যা খুবই অল্প সময়ে সমাধান করতে পারবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাব্য বিপদ হলো, এটি আমাদের বর্তমান এনক্রিপশন প্রযুক্তিকে অকেজো করে দিতে পারে। তাই কোনো দেশ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকাশ করে তা অন্য দেশের ব্যবসা, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং আরও অনেক কিছুর এনক্রিপশন ভেঙে দিতে পারে। ২০২৩ সালে এই ট্রেন্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও রাশিয়া কোয়ান্টাম প্রযুক্তি বিকাশে ব্যাপক অর্থ ঢালছে।
টেকসই প্রযুক্তিতে মনোযোগ
নতুন বছরে আরও বেশি টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। এখন অনেকেই স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এগুলো আরও উন্নত হবে।
এর পাশাপাশি এ ধরনের ডিভাইসের যন্ত্রাংশ বা চিপ তৈরির উপাদানগুলোর উৎস দেখবে মানুষ। নেটফ্লিক্স, স্পটিফাইয়ের মতো ক্লাউড সেবার ব্যবহার বাড়বে। এর পেছনে যে বিশাল ডেটা সেন্টার, সেগুলোর জ্বালানি উৎসের টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে অগ্রগতি হবে।
২০২৩ সালে সাপ্লাই চেইনের স্বচ্ছতার বিষয়ে মানুষের চিন্তা বাড়বে। তারা টেকসই ও জ্বালানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে ঝুঁকবে।
আরও পড়ুন: গুগলের ২৫ বছরের রেকর্ড ভাঙলো কাতার বিশ্বকাপ