ওয়াসিম হোসেন: যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পাঁচদিন ব্যাপি জেলা সাংস্কৃতিক উৎসব গতকাল শেষ হয়েছে। মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।
সমাপনী দিনের আলোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন গ্রহণ করলে সাইবার অপরাধ থেকে জাতি মুক্তি পাবে। বর্তমান সময়ে সাইবার অপরাধ একটি ভয়ংকর ব্যাধি। যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। কিভাবে সাইবার অপরাধ থেকে জাতিকে মুক্ত করা যাবে ও সাইবার অপরাধে আসক্ত হয়ে পড়া অপরাধীদের সমাজে স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরিয়ে আনা যাবে, সেই বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি জীবনকে করেছে সহজ। দূরকে করেছে নিকট। জানার গণ্ডি পেরিয়ে অপরিচয়ের পদচারণা এখন খুবই সহজ। আমাদের সবার জীবনের সাথে প্রযুক্তি মিশে গেছে। তাই এর ভাল মন্দ প্রতিটি দিক সকলেই অবগত। সাইবার জগতের কিছু কিছুু ভয়ংকর দিক আমাদের কল্পনারো বাইরে। প্রযুক্তির প্রতিটি ভাল দিকেই জীবনকে করে আনন্দময়, অপরদিকে প্রযুক্তির অন্ধকার জগত আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সমাজের জন্য ভয়ংকর।
তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ যারা করে তারাও মানুষ, যন্ত্র নয়। যন্ত্রকে ব্যবহার করেই সাইবার জগতে অপরাধীরা ভয়ংকর কাজে লিপ্ত। আর তাদের ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ। সাইবার অপরাধ থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। গবেষণা করতে হবে বর্তমান সময়ে কিভাবে নৈতিক শিক্ষার বিকাশ ঘটানো যায়। বর্তমান সময়ে ও সমাজে আমরা সকলে যন্ত্রের নিয়মে ব্যস্ত। সন্তানকে সময় দিতে পারি না। সন্তানের হাতে ধরিয়ে দেই স্মার্ট ফোন। সেই ফোনে সন্তান কি করছে ? সে খবর কি রাখি?
সামাজিক সর্ম্পকগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনের সাথে যুক্ত হচ্ছে ভার্চুয়াল সর্ম্পক। সেই জগতে ঘটে সাইবার অপরাধ। আর এই অপরাধ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। শুধুমাত্র আইন করে কোন কিছু করা সম্ভব নয়, হতে হবে সচেতন নাগরিক।
সামগ্রিকভাবে সাইবার অপরাধ দমনে সরকারকে হতে হবে কঠোর, জনগণকে হতে হবে সচেতন। সেই সাথে শিল্প সংস্কৃতির মুক্ত বিকাশ ও চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি প্রশ্ন করা হয়, কিভাবে সাইবার অপরাধ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব ? তাহলে ফিরে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর কাছে। পড়তে হবে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি। আমি মনে করি, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ একটি দর্শনের বই। যে বইয়ে কিভাবে দেশপ্রেমের মাধ্যমে একটি জাতিকে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করা যাবে, তার দিকনির্দেশনা আছে। আজকে চীনে গুগল ফেসবুকের কোন মাতবরী বা খামখেয়ালী নেই। সেখানে কাউন্ট্রি ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে অন্য দেশের কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারে না। আর আমাদের দেশের শিশু কিশোররা প্রবেশ করছে বিশ্বের ভাল মন্দ সব ধরনের সাইটে। আসক্ত হয়ে পড়ছে ভয়ংকর সাইবার অপরাধের সাথে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের দর্শনকে প্রতিটি মানুষ যদি গ্রহণ করে, তাহলে কোন অপরাধেই মানুষ জরাতে পারবে না। আগামী দিনে বিশ্বের মাঝে শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার সুযোগ মিলবে।
শেষ দিনের উৎসবে শার্শা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, যশোরের বাচিক শিল্পী সংঘ, তীর্যক যশোর, শিল্পকলা একাডেমি নৃত্যদল, নন্দন যশোর, সৃষ্টিশীল সংগীত একাডেমি, যশোরের থিয়েটার ক্যানভাস, যশোর শিল্পী গোষ্ঠী, ঝিকরগাছা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি সংগীত দল, যশোরের কৃষ্টিবন্ধন, শিল্পকলা একাডেমি আবৃত্তিদল, যশোরের সুর নিকেতন, বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ, যশোর সাহিত্য পরিষদের শিল্পীরা নৃত্য, গান, আবৃতি ও নাটক পরিবেশন করেন।