এ্যান্টনি অপু: যশোরের সাতমাইল-বারীনগর সবজির পাইকারি হাট এখন আগাম শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির প্রত্যাশিত ফলন হয়েছে এ জেলায়। এর মধ্যে বাম্পার ফলন হয়েছে মুলার। আবার বাজারে মুলার মূল্যায়নও হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা মুলার সেভাবে মূল্য পাননি। সেখানে এ মৌসুমে প্রতি কেজি মুলা ১৫-২০ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অথচ অন্য বছরে এক-দুই টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম না পাওয়ায় মুলা বাজারে ফেলে চলে গেছেন অনেক চাষি। কেউ আবার গরু দিয়ে খাওয়ায়ে দিয়েছেন মুলা।
যশোর কৃষি বিভাগের তথ্য, জেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা।
বারীনগর গ্রামের কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই লাভের পরিমাণ সীমিত। তবে যাদের মুলা ভালো হয়েছে এবার তারা ভালো দাম পাচ্ছেন।
শুক্রবার বারীনগর সবজির মোকাম ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন অন্য সবজির তুলনায় মুলার পরিমাণ ছিলো নজর কাড়ার মতো। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় মুলার গাদা। কৃষক বলছেন আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষকেরা একই জমিতে পরপর তিনবার মুলার আবাদ করেছে। ফলে ফলনও হয়েছে ব্যাপক। অন্যান্য জেলায় মুলার ফলন খারাপ হওয়ায় যশোর থেকে সরবরাহ বেড়েছে দ্বিগুণ। পদ্মা ও মধুমতি সেতুর কারণে দ্রুত সময়ে রাজধানী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে সবজি পৌছে যাচ্ছে।
মোকামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোবারক আলী বলেন, আগাম শীতকালীন সবজির ফলন ভালো হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিপণন, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষক এবং ব্যবসায়ী কেউ প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ হচ্ছে না।
দেশের বৃহৎ সবজি ব্যবসায়ী নিউ সীতাকুন্ডু সবজি ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী জানে আলম জুনু বলেন, এ বছর সব রকম সবজির ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও যে পরিমাণে লাভ হবার কথা ছিলো সে পরিমাণ লাভ হচ্ছে না। মুলার ফলনের পরিমাণ বেশি এটা নিয়ে কৃষকরা একটু আশা দেখছেন।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রতিনিয়ত সড়কে এ সব কাঁচামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে নানা হয়রানি এবং সড়কে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি এবং শিকার হতে হয়।
সাতমাইল মোকাম কর্তৃপক্ষরা জানান, প্রতিদিন এ মোকাম থেকে প্রায় ৪০-৬০ ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ২০-৩০ ট্রাকই যাচ্ছে শুধু মাত্র মুলার চালান। এ হাটে মুলা কেজি প্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এছাড়া বেগুন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাতমাইল বারীনগর সবজির মোকামের ইজারাদার হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বলেন, পদ্মা সেতুর এবং মধুমতি সেতুর কারণে যশোরের উৎপাদিত সবজি খুব দ্রুত সময়ে ঢাকা চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পৌছে যাচ্ছে। তবে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ী এবং কৃষক উভয়েই কাঙ্খিত লাভ করতে পারছেন না।