ক্রীড়া ডেস্ক: আফিফ হোসেন আউট হওয়ার পরই গ্যালারিতে নড়াচড়ার শুরু। কানায় কানায় ভরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির কিছু কিছু জায়গা ফাঁকা হতে থাকে তখন থেকেই। যাওয়ার পথে অনেক দর্শকই ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদকে রানের খাতা না খুলেই আউট হতে দেখেছেন। জয়ের জন্য তখন বাংলাদেশ দলের ৫১ রান, হাতে মাত্র ১টি উইকেট।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যান যদি কাউকে বলা যায়, তাহলে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম নিতে হবে। যার নামের পাশে ৭ বলে ০। আরেকজন মোস্তাফিজুর রহমান। এমন অবস্থায় কেউই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পক্ষে বাজি ধরার সাহস পাবেন না-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিজে থাকা দুজনের মনে ছিল এক সমুদ্র আত্মবিশ্বাস।
দুজন দশম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয়। মিরাজ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৯ বলে ৩৮ রান করে। মোস্তাফিজের ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ১০ রান।
বাংলাদেশ-ভারত এই ম্যাচটি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল না প্রথম ইনিংস থেকেই। মিরপুর স্টেডিয়ামের অসম গতির উইকেটে সাকিব আল হাসানের ৫ উইকেট ও ইবাদত হোসেনের ৪ উইকেটের সৌজন্যে ভারতকে ১৮৬ রানে থামানোর পরও বাংলাদেশের জয়ের কথাটা জোর গলায় বলা যাচ্ছিল না। প্রেস বক্সে অনেকেই শঙ্কা মেশানো কণ্ঠে বলছিলেন ‘জিতবে তো?’
বাংলাদেশ দলের রান তাড়ার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই দীপক চাহার খুঁজে পান ওপেনার নাজমুল হোসেনের ব্যাটের বাইরের দিকের কানা। স্লিপে থাকা রোহিত শর্মা নিচু হয়ে আসা বলটি লুফে নিয়েছেন সহজেই। কোনো রান না করেই আউট নাজমুল।
তিনে নামা এনামুল হকের ইনিংসও দীর্ঘ হয়নি। ২৯ বল খেলে ১৪ রান করেছে মোহাম্মদ সিরাজের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট মিড উইকেটে। লিটন দাসের সঙ্গে এনামুলের ২৬ রানের ধির গতির জুটিটা পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের বড় রান হতে দেয়নি। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান করেছে বাংলাদেশ।
তবে সে ক্ষতিটা ভালোই পুষিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ক্রিজে এসেই সিরাজকে কাভার বাউন্ডারিতে চার মেরে ভারতীয়দের বার্তা দেন। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে রান রেট ৩ থেকে ৪-এ নিয়ে যান। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা যথেষ্টই মনে হচ্ছিল। কিন্তু লিটন-সাকিবের আউটে ম্যাচের ছবিটা পাল্টে যায় মুহূর্তেই।
দুজনই ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার। ৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন উইকেটকিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসবন্দী হন। সাকিব সেই সুন্দরের বলেই ড্রাইভ করে চার মারতে গিয়ে কাভারে বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে বিদায় নেন। ম্যাচের গতিপথ ভারতের দিকে হেলে পড়ে তখন।
স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে খোলসবন্দী হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং। অথচ জয়ের জন্য দরকার মাত্র ৯১ রান, ম্যাচের আরও ২৭ ওভার বাকি। এমন সমীকরণ সামনে রেখে মুশফিকুর রহিম (৪৫ বলে ১৮) ও মাহমুদউল্লাহ (৩৫ বলে ১৪) খেললেন মন্থর গতির ইনিংস। দুজনই আউট হওয়ার আগে ৬৯ বল খেলে যোগ করেছেন ৩৩ রান। মারতে পারেননি একটি বাউন্ডারিও।
বাংলাদেশ এরপর বাউন্ডারির দেখা পায় মোস্তাফিজের ব্যাট থেকে। এরপর মিরাজও খুঁজে নেন পয়েন্ট ও ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট বাউন্ডারির সীমানা। দুজনের সে চেষ্টাটা তখন পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছিল না। কিন্তু মিরাজ-মোস্তাফিজ লড়ে গেছেন জয়ের আশায়। সে আশার আলোয় শেষ পর্যন্ত উদ্ভাসিত হলো বাংলাদেশের আরও একটি দারুণ জয়।
এর আগে বাংলাদেশের জেতার ভিত গড়ে দেয় বোলিং। মিরপুরের মন্থর উইকেটে নির্দ্বিধায় প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে দিয়ে চাপ তৈরি করে বাংলাদেশ। ৬ষ্ঠ ওভারে শেখর ধাওয়ানকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রো আনেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
অধিনায়ক রোহিত অবশ্য খেলছিলেন সাবলীল। অধিনায়ক রোহিত অবশ্য খেলছিলেন সাবলীল। চিন্তা বাড়াতে পারতেন তিনিই, মিরপুরের মাঠে সবচেয়ে সফল বিরাট কোহলিও যোগ দিয়েছিলেন তার সঙ্গে। একাদশ ওভারে তিন বলের ব্যবধানে এই দুজনকেই ফিরিয়ে দেন সাকিব।
সাকিবের মোহনীয় আর্ম বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান রোহিত। কোহলির উইকেটে অবশ্য বড় কৃতিত্ব লিটনের। সাকিব ড্রাইভ খেলেছিলেন, কাভারে দাঁড়িয়ে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় লিটন ক্যাচ জমান হাতে। পর পর দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে যাওয়া ভারতকে পথ দেখার চেষ্টা শুরু হয় রাহুলের। শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে তার জুটিটা জমেও উঠেছিল। আইয়ারের ভুলেই থামে তা। ইবাদতের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি ইবাদত। টপ এজ হয়ে ক্যাচ উঠে যায় সোজা।
সুন্দরকে নিয়ে এরপর লড়াই শুরু রাহুলের। বাকিদের ভোগান্তির মাঝে যেন অনেকটা ভিন্ন উইকেটে ব্যাট করছিলেন তিনি। অনায়াসে বের করছিলেন বাউন্ডারি। সুন্দরকে একপাশে রেখে জুটি ছাড়িয়েছিল পঞ্চাশ। ৩৩তম ওভারে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন সুন্দর। ৬০ রানের জুটির পর সাকিবকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে পয়েন্ট ক্যাচ দেন সুন্দর।
এরপরই ধসে যায় ভারতের ওয়ার মিডল অর্ডার। শাহবাজ আহমেদ টিকতে পারেন ৪ বল, দীপক চাহার ও শার্দুল ঠাকুর তিন বল। ইবাদত ছাঁটেন শাহবাজকে। সাকিব ফেরা বাকি দুজনকে। একা লড়াই চালাতে থাকা রাহুল ৪০তম ওভারে আউট হলে আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি ভারত।