সুনীল ঘোষ: ‘সকালে চিনি কিনলাম ১১০ টাকা কেজি। ঘন্টাখানেক পর একই বস্তার চিনির দাম নিলো ১১২ টাকা। সকাল গড়িয়ে দুপুরে একই দোকানি চিনির দাম ধরলেন ১১৫ টাকা কেজি।’ ক্ষোভের সাথে বললেন যশোর লালদীঘিপাড়ের চা দোকানি পিন্টু বিশ্বাস। একদিনে তিন দফা দাম বৃদ্ধির ঘটনাটি ২৮ নভেম্বর বড়বাজারের।
সোমবার বিকেলে বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ খুচরা দোকানে চিনি নেই। চিনির কৃত্রিম সংকটের জন্য পাইকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুষছেন খুচরা বিক্রেতারা। সিন্ডিকেটের কব্জায় বন্দি হয়ে গেছি বলেও মন্তব্য করেন মাছ বাজার এলাকার বেশ কয়েকজন মুদি দোকানি। এসব খুচরা বিক্রেরা বলেন-পাইকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে ‘রশিদ দেবো না, ইচ্ছে হলে নাও, না নিলে পথ মাপো! এধরণের ভাষা কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান মালিক বা কর্মচারীর হতে পারে না মন্তব্য করে এসব খুচরা বিক্রেতারা বলেন- বাড়তি দামে অখুশি হচ্ছেন ভোক্তা। অন্যদিকে তদারকি সংস্থার কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
রোববার হাটখোলা রোডে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে একটি পাইকারি প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন বলেও জানান খুচরা বিক্রেতা জিতেন্দ্রনাথ পাল। তিনি বলেন- এসব কারণে চিনি বিক্রি করছি না।
সরেজিনে হাতে গোনা কিছু মুদি দোকানিকে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত প্রতিকেজি বিক্রি করতে দেখা যায়।
হাটচান্নির মা-কালী ভান্ডারের সত্ত্বাধিকারী মধুসূদন পালন বলেন-পাইকারি বিক্রেতারা রশিদ দিচ্ছে না। যেকারণে চিনি বিক্রি বন্ধ করেছি।
গো-হাটা রোডে কথা হয় নিজামউদ্দিন নামে এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। তিনি বলেন- শুধু চিনি না, চাল, আটা, ময়দা, ডাল, ভোজ্যতেল, জিরা, মশলা ও প্রশাধনীসহ নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কিছু পণ্যের দাম বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। বাড়তি দামের চাপ সামলাতে অধিকাংশ ভোক্তা কম পণ্য কিনছেন বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
যশোরে লোকনাথ স্টোর, হাজী আলী স্টোর, পদ্মা স্টোর, কুন্ডু অয়েল, ফাল্গুনি ট্রেডার্স ও সাহা স্টোরসহ সর্বোচ্চ ১০ প্রতিষ্ঠানে পাইকারি দরে চিনিসহ কিছু পণ্য বিক্রি হয়।
হাটখোলা রোডের সাহা স্টোরের সত্ত্বাধিকারী বাবুল সাহা বলেন, ঢাকার পাইকারি বিক্রেতারাই রশিদ দিচ্ছে না। বর্তমানে ৫০ কেজির তীর মার্কা ৫৪৫০ এবং ফ্রেশ মার্কা চিনির বস্তা ৫৪৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগরু ও দেশবন্ধুসহ ৫ শিল্পগ্রুপ আমদানি, রিফাইনিং, বিপণনসহ দেশের চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। কৃত্রিম সংকট, সিন্ডিকেট বা দাম বৃদ্ধিসহ চিনি বিষয়ক যাকিছুই হয়- সেখানে তাদের হাত থাকে। যশোরে যারা ট্রেডিং করেন, তাদের কিছুই করার থাকে না।
জানা যায়, সর্বশেষ ১৭ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করে। নতুন দর প্রতিকেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৮ টাকা, যা আগে ছিল ৯৫ টাকা। ৫০ কেজি বস্তার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৫ হাজার ১শ’ টাকা। এ হিসেবে কেজির দাম হয় ১০২ টাকা।
তবে নতুন দাম নির্ধারণের আগেই বাজারে খুচরা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছিল ১০৭ টাকা থেকে ১১০ টাকা। নতুন দাম নির্ধারণের পর যশোরে প্রতিকেজি চিনির খুচরা দাম উঠেছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, বাজারে নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।