জাহিদ হাসান
২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর। যুবলীগের পরে সম্মেলন হয়েছিল জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের। মেয়াদ শেষে ছাত্রলীগের তিনবার (রিয়াদ-বিপুল কমিটি), (শাহী-জিসান কমিটি), (পিয়াস-পল্লব কমিটি) সম্মেলন হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে দুইবার। এতে শহিদুল ইসলাম মিলন-শাহীন চাকলাদার নেতৃত্ব পান। কিন্তু যুবলীগের সম্মেলন হয়নি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে হচ্ছে; হচ্ছে করে হয়নি যশোর যুবলীগের সম্মেলন। সর্বশেষ গেল বছরের ২৩ জানুয়ারি সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। দীর্ঘদিন সংগঠনটির সম্মেলন না হওয়ায় নতুন পদপ্রত্যাশীদের হতাশা বাড়ছে দিন দিন। তবে গতকাল খুলনা যুবলীগের সম্মেলন ও সম্প্রতি বাগেরহাট জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবি, সম্মেলনের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সাইফুল দৈনিক কল্যাণকে বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। সম্মেলন করার উদ্দেশ্যে গত বছর যশোরে বর্ধিত সভা করেছিলাম। তারিখ চূড়ান্ত হলেও করোনার কারণে সেটি হয়নি। নতুন করে বিভিন্ন জেলায় তারিখ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যশোরেও দ্রুত সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
২০০৩ সালের ১৯ জুলাই যশোর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে সভাপতি ও জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়। ৫৩ সদস্যের এই কমিটির মেয়াদ ২০০৬ সালে শেষ হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৭ বছর। একই অবস্থা উপজেলা যুবলীগের কমিটিগুলোতে। তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ছয় বছর পার করেছে সব উপজেলায়। ২০১৭ সালের ২১ মার্চ যশোর সদর ও শহর যুবলীগ, ২৯ মার্চ বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং এপ্রিল ও মে মাসে মণিরামপুর, কেশবপুর, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলা যুবলীগের তিন মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ।
আরও পড়ুন: উন্নয়নের গল্পে পেট ভরে না
তিন মাসের সেই আহ্বায়ক কমিটি ৫ বছর পার করেছে। দীর্ঘদিন পর গতবছরের এক ডিসেম্বর যশোর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ জানুয়ারি যশোরে জেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৩ থেকে ৬ জানুয়ারির মধ্যে যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপিসহ জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিতে বলা হয়।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মী ও পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা। সর্বশেষ গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সম্মেলনের দিন ঘোষণা করা হলে নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেন। অনেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জীবনবৃত্তান্ত পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই সম্মেলন স্থগিত করা হয়। খুলনাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় আবার নতুন করে সম্মেলন হওয়ার খবরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসিত। সভাপতি-সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছেন জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল,
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা মিলন, যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলম প্রমুখ। সূত্রের দাবি, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দৃশ্যমান দুটি গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপ রাজনীতির বিষয়টি মাথায় রেখে যুবলীগের কমিটিতে দু’পক্ষের নেতাকর্মী ছোট-বড় পদে স্থান পাবেন। যুবলীগের কমিটি ঘোষণার মধ্যদিয়ে যশোর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বিভক্তির রাজনীতির অবসান ঘটানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় আমরা হতাশ। তবে নেতৃত্বের সংকট নেই। কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমি যুবলীগের নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। যুবলীগের মানবিকতা আমরা জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠন হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকার পরেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না পাওয়ায় মানসিকভাবে তারা হতাশাগ্রস্ত। নতুন করে কয়েকটি জেলায় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় নতুন করে আমরা আশা করছি দ্রুতই যশোরে সম্মেলন হবে।
যারা রাজপথে জামাত-বিএনপিকে রুখে দিতে পারবে; আগামি সম্মেলনে সংগঠনের সেই ধরণের নেতৃত্ব আসুক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া ও মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ায় যশোর যুবলীগের সাংগঠনিক কোন ভিত্তি নাই। অনেকেই জেলা আওয়ামী লীগের চলে গেছে, কেউ মারা গেছে, অনেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। যে কারণে নির্বাচনের আগে দলে যুবলীগ গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করবে বলেই কেন্দ্রীয় যুবলীগ জোর দিচ্ছে সম্মেলনের দিকে। আশা করছি দ্রুতই যশোরে সম্মেলন হবে। সাবেক ছাত্রলীগনেতা, সৎ ও কর্মী বান্ধব নেতাদের নিয়েই যশোর জেলা যুবলীগ হবে। সেই যুবলীগ শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করবে। কাজ করবে মানবিক কল্যাণে।
আরও পড়ুন: ১৭ প্রার্থীর শীতল লড়াই