জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোরের ঐতিহাসিক টাউনহল মাঠের স্মৃতিবিজড়িত স্বাধীনতা মঞ্চের মূল কাঠামো ও অবয়ব ঠিক রেখে আধুনিকায়নের কাজ প্রায় শেষের পথে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মঞ্চটির উদ্বোধন করা হবে ১১ ডিসেম্বর বিকেলে।
মঙ্গলবার রাতে শহরের অভিজাত একটি হোটেলে যশোর ইনস্টিটিউটের আহ্বানে এক প্রস্তুতি সভায় দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে গ্রহণ করা হয়েছে নানা প্রস্তুতি।
প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপ-প্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, যশোর ইনস্টিটিউটের সহকারী সম্পাদক রওশন আরা রাশু, যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অধ্যাপক সুকুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, যশোর শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী সাঈদ আহমেদ বুলবুল ও যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন।
জানা যায়, প্রস্তুতি সভায় দিনক্ষণ নির্ধারণের পাশাপাশি সেই সময়ের আলোকচিত্রি আব্দুল হামিদ রায়হানকে (তিনি অনুষ্ঠানের ছবি তুলে দেশি বিদেশি পত্রিকায় সরবরাহ করেন) সংবর্ধনা প্রদান ও ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রথম জনসভার প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
মঞ্চ আধুনিকায়নে সংযোজন করা হয়েছে একটি গ্রিন রুম, একটি ওয়েটিং রুম ও একটি মেকাপ রুম। এ কাজে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এরফলে নাচ, গান ও নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী সুবিধার দ্বার খুলে যাবে।
দেশের প্রথম জেলা যশোর শত্রুমুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর। এর ৫ দিনের মাথায় ১১ ডিসেম্বর টাউনহল মাঠে জনসভা করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার। টাউনহল মাঠের পশ্চিমকোণে স্থাপিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন বাঙালি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।
ভাষণে যুদ্ধবিধবস্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ওয়্যার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতে ইসলাম ও মুসলিমলীগসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয় সেই ভাষণে। স্মরণকালের সভায় সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল ও জহির রায়হান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেই জনসভার সংবাদ সংগ্রহে ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিনিধিসহ বহু দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিকতার নিরিখে ‘মঞ্চটির নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’।
তারপর কেটে যায় টানা ৫০ বছর। দীর্ঘদিন আগে নির্মিত ‘স্বাধীনতা মঞ্চটি’ অযত্ন-অবহেলায় রূপ নেয় বেহালদশায়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বহু ঘটনার স্বাক্ষী টাউনহল মাঠ ও স্বাধীনতা মঞ্চ’র মর্যাদা রক্ষার দাবি ছিল বিভিন্ন মহলের।
বছর দুয়েক আগে যশোর সার্কিট হাউসে ‘স্বাধীনতা মঞ্চটি সংস্কারের দাবি তোলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপ-প্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি একরাম-উদ-দ্দৌলা ও পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু প্রমুখ।
তাৎক্ষণিক দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন স্থানীয় সরকার ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। চলতি বছরের ২৬ মার্চ দুপুরে ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, যশোর ইনস্টিটিউটের সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী ও ইনস্টিটিউট পরিষদের নেতৃবৃন্দ কাজের অগ্রগতি জানতে পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ৭১’র ঐতিহাসিক দিন ১১ ডিসেম্বর ’স্বাধীনতা মঞ্চ’ উদ্বোধনের ইচ্ছে প্রকাশ করেন।