ঢাকা অফিস : অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য একমত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি। এছাড়া আন্দোলনের কর্মসূচি ও রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের জন্যও একমত হয়েছে তারা। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকার বর্তমান রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে মেরামত করা দরকার। দেশের জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে, আমরা প্রস্তাব করেছি, একটা জাতীয় সরকার গঠন করে সেই রাষ্ট্রের পরিবর্তন করব।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছিলাম। প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে আমরা আলাদা আলাদা কথা বলেছি। আজকে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছি। এই অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে এক যোগে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রের পরিবর্তনের যে কথা আমরা বলেছি, তার জন্য আরও ডিটেইলস আলোচনা করে আশা করি আমরা একমত হতে পারব। এই বিষয়টিকে দ্রুত করা জন্য পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা আলোচনা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছব- এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সকলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করবার জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করব। এর মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য, আমাদের দফাগুলো, কর্মসূচি ও রূপরেখা সবই যেন করতে পারি- এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।‘
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জনগণ কিন্তু মুক্তিও পায়নি, স্বাধীনতাও পায়নি। রাজনৈতিক দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে ভোট চুরি করে অনৈতিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে, তাদের শুধু পতন ঘটাবেই না, রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে এবং সংবিধান পরিষদ করবে। এছাড়া আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোই একসঙ্গে করবে।’
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য হচ্ছে- এই ফ্যাসিবাদকে সরিয়ে দেওয়া। এর পর রাষ্ট্রটার পরিবর্তন করে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করা। এই দুটো লক্ষ্য নিয়েই আমরা বিএনপির সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা সবাই একমত হয়েছি এই ফ্যাসিবাদের পতনে যুগপৎ আন্দোলন করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা তিনটা বিষয় খুব পরিস্কারভাবে বলছি। আমরা সরকারের পদত্যাগ চাই। অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং তার অধীনে নির্বাচন এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার বদল চাই।’
সংলাপে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, ইমরান ইমনসহ অনেকে।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
চলতি বছরের ৮ আগস্ট জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই সাতটি দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা আওয়ামী লীগের পদত্যাগের দাবি করে আসছে।
সরকার পতনের আন্দোলনের দাবিনামা চূড়ান্ত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে এই সংলাপে বসল বিএনপি। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠনের পর এটি বিএনপির সঙ্গে তাদের প্রথম বৈঠক।
এর আগে চলতি বছরের মে-জুন মাসে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জনসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের সাথে আলাদা আলাদাভাবে সংলাপ করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।