নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। তাদের একটি অংশ পালিয়ে গেছে। কিন্তু প্রেতাত্মারা এখনো প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা সুযোগ বুঝে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে।
মঙ্গলবার বিকেলে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি তার ৩১ দফার আলোকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে। মরহুম তরিকুল ইসলামও আমৃত্যু মা, মাটি ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। আজকের নতুন প্রজন্মকে তরিকুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ও শিষ্ঠাচার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত লাভাবান বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে যিনি বা যারা রাজনীতি করেন বা করেছেন তাদের পরিনতি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। পতিত স্বৈরাচার ফ্যাস্টিসদের পরিণতি কি হতে পারে তা দেশের মানুষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছে। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ। আর মানুষের ও গণবিপ্লবের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। মরহুম তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর বারের সাবেক সভাপতি এ্যাড. নজরুল ইসলাম, ডাক্তার হারুন অর রশীদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, তন্ময় সাহা, এজেড এম সালেক, মোশাররফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছোটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, এ্যাড. জাফর সাদিক, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরে নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ। এছাড়া স্মরণ সভায় খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, আজকের এই স্মরণ সভায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে মরহুম তরিকুল ইসলাম কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তরিকুল ইসলাম সারাজীবনই আদর্শের সাথে কোন বেঈমানি করেননি। বিগত স্বৈরাচার এরশাদ আমলে এবং ফ্যাসিস্ট পতিত স্বৈরাচার হাসিনার আমলে ও ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে মরহুম তরিকুল ইসলাম বারবার কারাবরণ, হামলা, মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো তার আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। মরহুম তরিকুল ইসলামের সাথে আমার কাজ করার বেশি অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও যতটুকু সময় পেয়েছি ততটুকু সময়ে আমি তার কাছ থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করা শিখেছি। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আমি ও মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেব এক সাথে কারাবরণ করেছি। একদিন পিজি হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য তাঁর সাথে আমার দেখা হয় ও খুব সামন্যই কথা হয়। জীবনে প্রথম কারাবরণ করায় আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমাকে দেখে তরিকুল ইসলাম সাহেব বললেন, “তারেক বুকে সাহস রাখো, নিজেকে শক্ত রাখো, ইনশাল্লাহ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।” সেই কথা শুনে আমি কিছুটা হলেও সাহস পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার কারণে মরহুম তরিকুল ইসলামকে এরশাদ সরকারের আমলে কিছু দিন গুম করা হয়েছিল। তার পর তিনি বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। বহু মিথ্যা মামলায় তাকে আটক করে রাজনৈতিক আদর্শচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ততোই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আাদর্শের প্রতি অটুট ও অবিচল থেকে মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। মরহুম তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার একজন বিশ^স্ত সহচর ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে ধীরে ধীরে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বহুবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপরও তিনি শেকড়ের কথা ভোলেননি। তৃণমূল মানুষের সাথে তাঁর সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ছিল। আমিও মরহুম তরিকুল ইসলামের এই গুণ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূলের সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। কারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য এই যোগাযোগের কোন বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, আজ রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার সময় এটা নয়। তারপরও দুই একটি কথা না বলে পারছি না। ছাত্র জনতার মহা বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছি। হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের দোসর, পেতাত্বরা এখনো সর্বত্র বসে আছে। তারা প্রশাসনকে অস্তিতিশীল করে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মনে রাখতে হবে এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসদরা সময় সুযোগ বুঝে ফের জাতির ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। আপনারা যারা জাতীয়তবাদের আদর্শ বুকে লালন করেন, তাদেরকে বজ্রকঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব রকম ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পথে নিতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল মাত্র সংবিধানে কয়েকটি শব্দ যোজন বিয়োজন করলেই সংস্কার হবে না। সংস্কার করতে হলে প্রথমেই মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছে। সেই দাবি বাস্তবায়নে বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে।
আপনাদেরকে সেই দাবি পূরণে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের বিশৃঙ্খলা বা অনৈক্যের সুযোগে ফের স্বৈরাচার যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে না পারে। তিনি সবাইকে বজ্রকঠিন ঐক্যগড়ে তোলার আহ্বান জানান। পরে তিনি মরহুম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।