নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের উত্তর ললিতাদহ গ্রামের আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা। নিঃস্ব হয়ে অনেক পরিবারের সদস্যরা ভাসছে অথৈ সাগরে।
সরেজমিনে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বেশ কয়েকজন আদম ব্যাপারী বা দালালের সন্ধান মেলে। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষজনকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীরা জানান, উত্তর ললিতাদহ গ্রামের আব্দুর রশিদ ঢাকায় বসে আদম ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। গ্রামে কমিশন ভিক্তিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন সাদ্দাম, ইব্রাহীম ও কামরুল নামে তিন যুবক। এক বছর আগে তুরস্ক যাওয়ার জন্য রসুলপুর গ্রামের সাগর, শাকির ও হৃদয়ের কাছ থেকে দেড় লাখ, ললিতাদাহ গ্রামের আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ৪ লাখ এবং সোহাগের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। টাকা নেবার সময় কথা ছিলো ৩ মাসের মধ্যে তাদের বিদেশ নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আজও পর্যন্ত কেউ যেতে পারেননি। টাকা নেওয়ার সময় আব্দুর রশিদ সকলকে স্ট্যাম্প ও চেক নিয়েছেন। ওই চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে টাকা আদায় চাইতে তার বাড়িতে গেলে শুধু সময় নিচ্ছেন। কিন্তু পরের টাকায় নিজে গড়ে তুলছেন আলিশান বাড়ি। যে কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোগী মনোয়ার নামে এক যুবক জানান, তার বড় ভাই আদম ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের মাধ্যমে ৪ বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছেন। সকল টাকা পরিশোধ কারার পরও এখনো তার ভাই ওই দেশের বৈধ ভিসা পায়নি। কিন্তু বলা হয়েছিলো তার ভাইকে বৈধ ভিসায় বিদেশ নেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রামের কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ যুবক আব্দুর রশিদের কাছে ১ থেকে ৪ লাখ করে টাকা দিয়েছেন বিদেশ যেতে। কিন্তু ২ থেকে ৩ বছর পার হয়ে গেলেও তারা কেউ বিদেশ যেতে পারেনি। অনেকে সুদে টাকা নিয়ে আব্দুর রশিদকে দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। আবার কেউ পাওনাদারদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। আব্দুর রশিদ তাদের টাকা নিয়ে জমি কিনে কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। গ্রামের অনেক জমি কিনেছেন। তার বাড়ির কাজ এখনো চলমান। অথচ পাওনা টাকা চাইতে গেলে পরিশোধ না করে হয়রানি করছেন।
এদিকে, ২৯ মার্চ পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী আব্দুর রশিদের বড়িতে গেলে জানানো হয় টাকা পরিশোধের ব্যাপারে তিনি সন্ধ্যার পর সকলকে নিয়ে বসবেন। কিন্তু রাতে তিনি ৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে তাকে ও তার স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। কিন্তু ৩১ মার্চ তার বাড়িতে যেয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী সালমা বেগমকে মারপিট করা হয়নি। তিনি সুস্থ ও বাড়িতে কাজ করছেন।
আব্দুর রশিদের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, তাকে নয়, তার স্বামীকে মারপিট করা হয়েছে। যশোর থেকে তার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদেশ যাবার জন্য অনেকে তার স্বামীর কাছে টাকা দিয়েছে সত্যি। পর্যায়ক্রমে সকলকে তার স্বামী বিদেশ পাঠাবে; না হয় টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।
হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিল্লাল হোসেন জানান, কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জনের নালিশের ভিত্তিতে তিনি আব্দুর রশিদের নিয়ে শালিশ বৈঠক করেছেন। প্রতিবার টাকা ফেরতের অশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত কেউ টাকা পাননি।