কল্যাল ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশে আরেকটি বড় আন্দোলন হতে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তাদের দল নাকি কোটি মানুষের। লক্ষ-কোটি মানুষ আমাদের দেখায়েন না; আমরা জানি কার কত মানুষ। ফ্যাসিবাদী আমলে তাদের কর্মীর সংখ্যা আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, ইনসাফের সঙ্গে থাকলে, ন্যায়ের পক্ষে থাকলে একজন কর্মী এক লাখ মানুষের থেকেও শক্তিশালী হয়ে যায়। যারা দুর্নীতি করবে, চাঁদাবাজি করবে-এনসিপি তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। সেই লড়াইয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন আসছে। যারা সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। শুক্রবার বিকালে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড়ে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এনসিপি ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়তে চায় উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, দেশের মানুষ বিচার, সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। যারা সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করতে না দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করতে দেব না। পুলিশ প্রশাসন নির্দলীয় থাকবে। আমরা চাই না সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা গুমের সঙ্গে জড়িত থাকুক।
নির্বাচন কমিশনের দলীয়করণের তীব্র সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশনকে সব থেকে বেশি দলীয়করণ করা হয়েছে। অতএব, নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল সেটি করতে দিতে চায় না। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেব না। আমরা ইনসাফভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করব।
যশোরের স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়েও এনসিপি অবগত আছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার কথা জানি, যশোরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থা জানি। বেনাপোলের দুর্নীতি আর মানব পাচারের কথাও আমরা জানি। এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হোক।
পথসভায় এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা শাপলা মার্কার কথা বলেছি, আর তারা জাতীয় ফুলের ওসিলায় ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। আমরা সংস্কারের কথা বলছি, আর তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের কথা বলছে। এখনো শেখ হাসিনার পুলিশ বহাল আছে, শেখ হাসিনার প্রশাসন বহাল আছে আর তারা শুধু নির্বাচন চায়। তিনি আরও বলেন, হাসিনা ভারতের কাছে বাংলাদেশকে বন্ধক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারা জীবন মনে রাখবে। আমরা বলছি, আমরাও মনে রেখেছি। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। কিন্তু তাদের দাদাগিরি মেনে নেব না। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। এখানে কোনো বিদেশির দাদাগিরি চলবে না।
পথসভায় বক্তৃতা করেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাহমুদা রিকু, আতাউল্লাহ, সাকিব শাহরিয়ার, খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল, ইয়াহিয়া জিসান ও সালমান জাভেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তর) সারজিস আলম। উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ।
এর আগে সকালে যশোরের একটি হোটেলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কোনো কোনো রাজনীতিক ৩২ নম্বর ভাঙাকে ‘মব’ বলছেন। কয়দিন পর তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকেও ‘মব’ বলবে। শুধু আওয়ামী লীগের ভোটের আশায় এসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, কেউ কেউ এনসিপিকে ‘নির্বাচনবিরোধী দল’ হিসাবে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এনসিপি কখনই নির্বাচনবিরোধী দল নয়। আমরাও নির্বাচন চাই। তবে বিচার, সংস্কারসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দাবির প্যাকেজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চাই না। প্রয়োজনে এসব দাবি বাস্তবায়নে আরেকবার গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো হবে। যারা এর বিরোধিতা করবে তাদের লাল কার্ড দেখানো হবে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার নড়াইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা বলেছি গণহত্যার বিচার, দেশের মৌলিক সংস্কার এবং নতুন সংবিধান লাগবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সেই তিনটির কোনো একটিও সম্পূর্ণভাবে আদায় করতে পারিনি। এ সরকার এবং অন্যসব রাজনৈতিক দল বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান থেকে নির্বাচন নিয়ে বেশি তড়িঘড়ি করছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি নির্বাচন আমরাও চাই। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
নড়াইল শহরের পুরাতন বাস টার্মিনালের মুক্তমঞ্চে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ