নিজস্ব প্রতিবেদক
উদীচী হামলার বিচার করতে না পারা রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগেই জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। বিচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদাসীনতাই বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে হলি আর্টিজানের মত ভয়ানক পরিণতির দিকে। উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা ছিলো দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর এ ধরণের কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সূচনামাত্র। শুরুতেই যদি উদীচী ট্র্যাজেডি তথা যশোর হত্যাকা-ের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের স্বরুপ উন্মোচন করা যেতো তাহলে পরবর্তী ঘটনা হয়তো ঘটতো না। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার দুই যুগপূতি অনুষ্ঠানে গতকাল সন্ধ্যায় যশোর টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার, এই লজ্জা ও অপমান কার?’ এই স্লোগানে এ আলোচনাসভার আয়োজন করে যশোর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য। সভায় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, উদীচী প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। আর তাই উদীচীর ওপরই নেমে এসেছিল বোমা হামলা। শুধু উদীচী নয়, এর পরবর্তীতে একে একে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপাসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকা- চালায় মৌলবাদী অপশক্তি। এ মামলার সব ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে অবিলম্বে শিল্পী-কর্মীদের হত্যার সঙ্গে জড়িদত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। এসময় বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ সভাপতি ইকরামুল কবির ইল্টু, সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের যশোরের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, উদীচী যশোরের উপদেষ্টা সোহরাব উদ্দীন, সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সংসদের আহ্বায়ক সুখেন রায়, ঢাকা বিভাগের সদস্য সচিব নাজমুল ইসলাম, বরিশাল বিভাগের আহ্বায়ক বিশ^নাথ দাস মুন্সী, যশোর ইনস্টিটিউট সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি দীপাঙ্কর দাস রতন, প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান, জেলা উদীচীর সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু প্রমুখ। আলোচনা সভার পর সন্ধ্যায় শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। এরপর ছিল প্রতিবাদি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। এরপর হত্যাকাণ্ডের শিকার শিল্পী-কর্মীদের স্মৃতিতে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ, উদীচী যশোর সংসদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা জাসদ, সিপিবি যশোর, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবর্তন যশোর, স্পন্দন যশোর, কিংশুক যশোর, মুন্সী রইস উদ্দিন সংগীত একাডেমি, চারুপীঠ যশোর, উদীচী যশোর সরকারি এম এম কলেজ, অক্ষর শিশু শিক্ষালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে মুখে কালো পতাকা বেঁধে প্রতিবাদি মিছিল বের হয়। সবার মুখে কালো পতাকা ও হাতে বিভিন্ন স্লোগান প্লেকার্ড স্ববলিত মিছিলটি টাউনহল ময়দান থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
প্লেকার্ডে লেখা ছিলো মৌলবাদীরা হও সাবধান/ক্রান্তিকালে জন্মেছি যুদ্ধে যুদ্ধে বেড়েছি/লড়তে জানি মরতে জানি, জীবন দিয়ে লড়তে জানি। প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে গভীর রাতে যখন হাজারো মানুষ ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউলগানের সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হয়ে ছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেওয়া বোমার। নৃশংস হামলায় প্রাণ হারায় ১০ জন। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা মানুষ।
২ Comments
Pingback: সিরিঞ্জ সংকটে বন্ধ শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম - দৈনিক কল্যাণ
Pingback: ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে যশোর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত - দৈনিক কল্যাণ