নিজস্ব প্রতিবেদক
শুধু একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবেও অনন্য ছিলেন যশোরের পরিচিত মুখ ও চিত্রশিল্পী সোহেল রানা প্রাণন। নিজের শহরটাকে তিনি চিত্রশিল্প সংস্কৃতিতে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। প্রাণন অনেকটা নিভৃতে চলে গিয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হিসেবে তার যথাযথ মূল্যায়ন আজও হয়নি। চিত্রশিল্পী প্রাণনের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে আরো অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। গতকাল শনিবার বিকালে চিত্রশিল্পী সোহেল প্রাণন’র ৪৫ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং শিল্পীর জীবন ও কর্ম জীবন নিয়ে স্মরণসভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। যশোর পৌরপার্কে অবস্থিত চারুপীঠ যশোর মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চারুপীঠ যশোর ও বণিকা আর্ট স্টুডিও। এর আগে, এদিন দুপুর থেকে পৌর পার্কে বসে কচি কাচাদের মিলনমেলা। চিত্রশিল্পী সোহেল রানা প্রাণনের স্মরণে রং আর কাগজে চলে শিশুদের ছবি আঁকার খেলা। ফুটে উঠে প্রাণ প্রকৃতি থেকে শুরু হয়ে নান্দনিক সব স্থাপনার দৃশ্য। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৬০ শিশু। অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, সোহেল প্রণয় প্রাণের মানুষ ছিলেন। এই তারুপীঠ থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন। তিনি যশোরসহ সারাদেশে তার চিত্রকর্মের প্রমাণ রেখে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, সোহেল প্রণয়ের মতো গুণী শিল্পীকে অল্প সময়ে হারিয়েছি। সোহেলের মতো মানুষ তার কর্ম জীবনের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন যশোরের প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী মফিজুর রহমান রুনু, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সায়েদা বানু শিল্পী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, সুলতান ফাউন্ডেশনের কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী, সংগীত শিল্পী শীতল, সোহেল প্রণয়ের স্ত্রী সান্তনা শাহরিন নিনি, উন্নয়ন কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মী নবনীতা তপু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুপীঠ যশোরের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ।
চিত্র শিল্পী সোহেল রানা প্রাণন ১৯৭৮ সালে যশোরে জন্ম গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ ধানম-ি থেকে ড্রইং এন্ড পেইন্টিং-এ মাস্টার্স অফ ফাইন আর্ট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার আগে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে ব্যাচেলার ডিগ্রি নেন খুলনা আর্ট কলেজ থেকে। এই শিল্পী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বেশকিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্পীদের অনেকগুলো আর্টক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন প্রাণন। এসব ক্যাম্পে দেশি-বিদেশি খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণ ছিল। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন। সোহেল তার তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে গল্প শুনিয়েছেন, কবির মতো বয়ান দিয়েছেন, মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, প্রণোদনা জুগিয়েছেন। তার তুলিতে বাংলার নৈসর্গিক চিত্র যেমন উঠে এসেছে, তেমনি অনেক মানুষের প্রতিকৃতি একেছেন সযতেœ। একেছেন গভীর মমতায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিও। তার তুলিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বহু বন্ধুর মুখ। একেছেন পাবলো পিকাসোকে, একেছেন জয়নুল আবেদীন, এসএম সুলতান, কামরুল হাসান রামকিংকর বেইজ, রবী ঠাকুর, কবি নজরুল, ভ্যানগঘ, চেগুয়েভারা, ফ্রিদা কালো, চিত্র নায়িকা সুচিত্রা সেন, ববিতাসহ বহু লিজেন্ডের মুখাবয়ব। একেছেন নানা ঘরাণার ছবি। তার চিত্রকলার বিষয় বাংলার প্রকৃতি, মানুষের মুখ, জনজীবনের কর্মিষ্ঠ ও অলসায়িত রূপ। এছাড়া নদী, খাল, বাড়ির আঙিনা, প্রাঙ্গণ, মাঠ, প্রাণনের পর্যবেক্ষণের বিশেষ দিক।
