কমিটি ঘোষণার পরদিন ১৯ নেতার পদত্যাগ
সংবাদ সম্মেলনে করায় ১০ জনকে মারপিট
নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পরদিন শনিবার সেখানকার ১৭ ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক, আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৯ নেতা পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে পকেট কমিটি ঘোষণা করায় অভিযোগ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। শনিবার বিকালে প্রেসক্লাব যশোরে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেসক্লাবের সামনে ১০ জন নেতাকর্মী বেধড়ক মারপিটের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন পদবঞ্চিত নেতারা। তবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত আহতরা তাদের নাম প্রকাশ না করলেও তারা সবাই লেখক ভট্টচার্য’র অনুসারী বলে জানিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পকেট কমিটির বিরুদ্ধে এবং হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শনিবার জেলা ছাত্রলীগ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। কমিটির সভাপতি করা হয় মাহমুদুল হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রমেশ দেবনাথকে। কমিটিতে একজন সহ সভাপতি একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়। ঘোষিত উপজেলা কমিটিতে অনভিজ্ঞ, বিতর্কিত, রাজনৈতিক ভারসাম্যহীন এবং সদ্য এসএসসি পাশ করাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দাবি করে খেদাপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান বলেন, ঘোষিত কমিটির সভাপতি মণিরামপুর বাজারে একটি ফাস্টফুড ব্যবসায়ী এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পর্যন্ত। এমনকি উপজেলায় ছাত্রসমাজের কাছে তিনি বিবাহিত ও ডিভোর্সি হিসাবে সমালোচিত। সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথের ছাত্রত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুগ্ম সাধারণ পদে এস এম বাপ্পী হুসাইন কোন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সদস্য না। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান অভি সদ্য এসএসসি পাস এবং ছাত্রলীগের কর্মকা-ে অতীতে দেখা যায়নি। এরা সকলেই মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের অপরিচিত মুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘদিন উপজেলা রাজনীতি সক্রিয় থেকেও তারা পদ পদবি না পেয়ে হতাশ। অথচ অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ও অযোগ্যদের পদ দেয়া হয়েছে। এসব কর্মকা-ের মূল হোতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের সক্রিয় সভাপতি-সম্পাদক এবং আহ্বায়করা গণপদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগনেতা হাদিউজ্জামান বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে প্রেসক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের কাছে হামলার শিকার হয়েছি। এই ঘটনায় ১০ জন ছাত্রলীগনেতা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মণিরামপুর সরকারি কলেজের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও ভোজগাতি ইউনিয়নের আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা শহরের একটি বাড়িতে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্মগোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান। তবে হামলার সাথে কারা জড়িত সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা যখন প্রেসক্লাব যশোরের সামনে দাঁড়ায় তখন এম এম কলেজ ছাত্রলীগনেতা সৌরভ ভট্টাচার্য এবং ছাত্রলীগনেতা রাব্বীর নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ যুবক আসে। তারা মণিরামপুর থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বাগবিত-া করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সৌরভ ভট্টচার্যের সাথে থাকা ছাত্রলীগনেতা রাব্বী, এনামুলসহ আট থেকে দশ জন পদবঞ্চিতদের ডেকে নিয়ে সার্কিট হাউজের দিকে নেয়। সেখানে হাতুড়ি, লাঠি, হকস্ট্রিক দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেলে তারা পালিয়ে যায়। এসময় দুই সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন।
জানতে চাইলে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, মণিরামপুরে একটি সুন্দর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে আরো কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম অনুর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রে নাম প্রস্তাবনা করা হয়েছে। পদ বঞ্চিতদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তারা কেউ ছাত্রলীগনেতা না। তার পরেও এমন হামলার ঘটনার সাথে যদি কোন ছাত্রলীগনেতা জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে যশোরে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে শনিবার রাতে মণিরামপুর ফিরে পদ বঞ্চিত ও হামলার শিকার অংশের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। তাদের উপর হামলাকারীদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে তৎপরতা চালানোর খবর পাওয়া গেছে।