নিজস্ব প্রতিবেদক ও খুলনা ব্যুরো
টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে চাকরির প্রলোভনে টুম্পা নামে এক তরুণীকে ভারতে পাচারের পর হত্যার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্তসহ তিন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-৬ এর সদস্যরা। শুক্রবার রাতে যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদেরকে আটক করা হয়। অভিযানে যশোর ও খুলনার দুটি দল অংশ নেয়।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কমান্ডার লে. এম নাজিউর রহমান জানান, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই র্যাব আসামিদের গ্রেফতাররের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং অভিযান অব্যাহত রাখে। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করে। এরপর শুক্রবার অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী আলী হোসেন এবং পাচারকারী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল-আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা টুম্পাকে পাচার ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। টুম্পা পাচারের ঘটনায় ঢাকার ডেমরা থানায় মামলা হওয়ায় আসামিদের ডেমরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আটককৃতরা হলেন, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসেন (২০), খুলনা সদর থানার বাসিন্দা কুলসুম বেগম (৪৫) ও তার ছেলে আল-আমিন (১৯)। হত্যাকা-ের শিকার তরুণী টুম্পা (১৭) ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, গ্রেফতার হওয়া কুলসুম বেগমের মেয়ে বৃষ্টি এবং জামাই যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাসিন্দা নবাব ভারতে বসবাস করে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পাচার করে নিয়ে যায়। বৃষ্টি ও নবাবের সহযোগী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল আমিন। এই চক্রের সদস্যদের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা টুম্পাকে টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে দেয়।
তিনি আরও জানান, প্রলোভনের ফাঁদে পড়লে ২০২১ সালে টুম্পাকে খুলনায় কুলসুম বেগমের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয়া হয়। টুম্পাকে ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করানো হতো। এরপর বৃষ্টি ও নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য টুম্পাকে দুই মাস আটকে রাখা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো। পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
পরবর্তীতে টুম্পা পাচারকারীদের অনেক গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে নবাব ও বৃষ্টির নির্দেশে গত ২৬ জানুয়ারি আলী হোসেন টুম্পাকে হত্যা করে। এরপর ভারতে টুম্পার লাশ উদ্ধার হলে গুজরাট পুলিশ ফোন করে টুম্পার বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একটি ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় আসামি আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যাব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
১ Comment
Pingback: চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা