নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘাতকদের ২৪ বছরেও শনাক্ত করা যায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল শুনানিতে ঝুলে আছে মামলার বিচারিক কার্যক্রম। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিবছরই বলছেন, তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন মামলাটির কার্যক্রম শুরু করার। এমনই পরিস্থিতিতে আজ শনিবার থেকে উদীচী হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে তিন দিনব্যাপি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে শক্তিশালী বোমা হামলা চালানো হয়। বোমার আঘাতে শিল্পীসহ ১০ জন নিহত ও আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হন। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রীস আলী বলেন, উদীচী হত্যা মামলাটি উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। বিচারপতি আশ্বাস দিয়েছিলেন মামলাটি যাতে দ্রুত শুনানি হয় সেই পদক্ষেপ তিনি নেবেন। কিন্তু আজও শুনানি হয়নি। আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হলে নিম্ন আদালতে বিচার কাজ শুরু সম্ভব নয়।
উদীচী ট্র্যাজেডিতে একটি পা হারানো সুকান্ত দাস বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তী সময়ে সেই আওয়ামী লীগ আরও চারবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এতো বছরেও হত্যাকান্ডের বিচার হলো না। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কথা বলি। সেই স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকতেও যখন বিচার হয় না, তখন খুব কষ্ট লাগে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে উদীচী ট্র্যাজেডির বিচার হবেই।’
উদীচীর সম্মেলনে সেই বোমা হামলার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা হয়। প্রথমে কোতোয়ালি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডির ওপর ন্যাস্ত হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরবর্তীতে চার্জ গঠনের সময় উচ্চ আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলামকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলা আদালতে গড়ানোর ৭ বছর পর ২০০৬ সালের ৩০ মে মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামলার এমন রায়ে যশোরসহ সারাদেশে প্রগতিশীল ঘরানার মানুষ বিস্মিত হন। অন্যদিকে, দেশের আলোচিত জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান আটক হওয়ার পর পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে। তার ওপর ভিত্তি করে এ মামলার পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়। মুফতি হান্নানের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দির পর উদীচী হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। পরবর্তীতে এই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে যশোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ২০১০ সালের ৮ জুন ওই আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির পর আসামিদের বক্তব্য জানতে চেয়ে বিচারিক বেঞ্চ নোটিশ জারির আদেশ দেন। হাইকোর্ট থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত নথিপত্র ২০১০ সালের ২৬ জুলাই যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছায়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে খালাস পাওয়া আসামিরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। সিআইডির ত্রুটিপূর্ণ চার্জশিটের কারণে ২০০৬ সালের ৩০ মে আদালত থেকে খালাস পেয়ে যায় এই মামলার সব আসামি। পরে সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু এরপর মামলাটির আপিল শুনানি আর হয়নি। আটকে আছে আইনের বেড়াজালে। বিচারের এই দীর্ঘ বিড়ম্বনায় ক্ষুব্ধ যশোরের মানুষ এখন দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন।
উদীচী ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপি প্রতিবাদী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংগঠনটি। ‘দুই যুগেও হয় না বিচার! এই লজ্জা ও অপমান কার’ এই স্লোগানে শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয় মামলার বর্তমান অবস্থা ও গৃহীত তিন দিনের কর্মসূচি। সংবাদ সম্মেলনে উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, মামলাটি রাজনীতিকরণ হওয়ায় সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে। বিচার কাজ তরান্বিত করার জন্য উদীচী কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়েছে। সবসময় আমরা বিচার দাবি করছি। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি।
দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার সকাল ১০ টায় টাউন হল ময়দানে ২৪ জন চিত্রশিল্পী রঙ তুলিতে উদীচী হত্যাকান্ডের সেই দিনের চিত্র ফুটিয়ে তুলবে। ৫ মার্চ উচীচী কার্যালয়ে মুক্ত আলোচনা, ৬ মার্চ টাউন হল ময়দানে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সন্ধ্যায় প্রতিবাদী মিছিল, আলোচনা ও মশাল প্রজ্জ্বলন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উদীচী যশোরের সভাপতি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর আফফান ভিক্টর, সদস্য সচিব কাজী শাহেদ নেওয়াজ।
সর্বশেষ
- দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানিতে ধস, রাজস্ব নেমে অর্ধেকে
- জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতু, জিএস শিবির সমর্থিত মাজহার
- দল গঠনের নাটকীয়তা ছাপিয়ে জয়ে চোখ যশোরের
- চুয়াডাঙ্গায় যৌথ অভিযানে দেশীয় পিস্তল উদ্ধার
- ভারতে গণেশ বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ঢুকে পড়ল ট্রাক, নিহত ৯
- সালমানের পর এবার অভিনেত্রী দিশার বাড়িতে গোলাগুলি, আতঙ্কে বলিউড
- শার্শা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ৪ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ আটক
- ধর্ষণের পর কিশোরীকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে আত্মহত্যা বলে প্রচার
১ Comment
Pingback: কিশোর গ্যাং সদস্য রাকিব দু’টি বার্মিজ চাকুসহ গ্রেফতার