পাইকগাছা প্রতিনিধি
অবশেষে ৫ দিনের মধ্যে আলোচিত গৃহবধূ তাজমিরা হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় শহিদুল মোড়ল (৪৫) ওরফে মাস্টার নামে সর্বশেষ একজনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার সুন্দরবন পালানোর সময় উপজেলার সীমান্তবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন কুমখালী এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক শহিদুল মোড়ল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার কাছ থেকে হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছেন থানার ওসি জিয়াউর রহমান। এ নিয়ে এ পর্যন্ত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মোট ৩ জনকে আটক করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ধান ক্ষেতের পাশ থেকে উপজেলার ধামরাইল গ্রামের মীর ওবায়দুল্লাহর স্ত্রী গৃহবধূ তাজমিরা বেগমের (৩৮) গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ তাজমিরার স্বামী ওবায়দুল্লাহ ও ভাসুর শহীদুল্লাহ মীরের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মৃত ভাই সাংবাদিক মামুনের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। জমি সংক্রান্ত এ বিরোধ কয়েকটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। এলাকার দুটি পক্ষের একটি পক্ষ গৃহবধূ তাজমিরাদের পক্ষ নেয়। অপর একটি পক্ষ মামুনের মেয়ে মৌসুমীদের পক্ষ নেয়। তাজমিরাদের যারা পক্ষ নেয় তারা তাজমিরাকে ব্যবহার করে মৌসুমীদের পক্ষ নেয়া মধ্যস্থতাকারীদের ফাঁসানো জন্য ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করে। চক্রান্তকারীরা পরিকল্পনা নেয় মৌসুমী ও তাদের লোকজন যেদিন এলাকায় আসবে সেদিন তাদেরকে ফাঁসানো হবে। জমি বুঝে নিতে মৌসুমী ও তার লোকজন ৩০ জানুয়ারি এলাকায় এসে রাত্রী যাপন করে। এদিন সন্ধ্যায় গৃহবধূ তাজমিরা সহ ষড়যন্ত্রকারীরা তাজমিরার ভাসুর শহীদুল্লাহর চায়ের দোকানে গোপনে বৈঠক করে। বৈঠকে ষড়যন্ত্র সফল হলে কেউ জমিতে ভাগ বসাতে পারবে না বলে গৃহবধূ তাজমিরাকে আশ^স্ত করে। এতে তাজমিরা খুশি হয় তাদের উপর। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় তাজমিরাকে। রাত ১২টার দিকে ভাসুর শহীদুল্লাহ তাজমিরাকে বসতবাড়ি থেকে ডেকে তার চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। এরপর তাজমিরাকে চায়ের দোকানে ঢুকিয়ে দোকানে সাটার লাগিয়ে ভাসুর শহীদুল্লাহসহ ৬ জন চক্রান্তকারী তাজমিরার মুখে গামছা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আধা ঘন্টা পর মৃতদেহ এলাকার জনৈক সালেক মীরের ধান ক্ষেতের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে খেঁজুর গাছের তলায় রেখে ছুরি দিয়ে মৃতের গলা কেটে ক্ষতবিক্ষত করে মৃতদেহ ধান ক্ষেতের পাশে রেখে দেয়। পরে সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ওসি জিয়াউর রহমান জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রথমে গৃহবধূর ভাসুর শহীদুল্লাহ মীর, পরে মফিজুল গাজী এবং সর্বশেষ শহিদুল মোড়ল ওরফে মাস্টারকে আটক করা হয়েছে। ওসি বলেন, শহিদুলকে আটকের পর তার কাছ থেকে হত্যা ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। শহিদুল মাস্টার শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আটক অপর দুই আসামির রিমান্ড আবেদন সোমবার শুনানীর দিন ধার্য্য রয়েছে। এ ঘটনায় পলাতকদেরকে দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে থানা পুলিশের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।