নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর
মণিরামপুর পৌর শহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনায় জিডি’র অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে উপঢৌকন হিসেবে মোবাইল সেট কিনে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন এই মোবাইল সেট কিনে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার পৌর শহরের একটি দোকান হতে এই মোবাইল সেট কেনার সময়ের ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এদিকে মোজাফ্ফর হোসেন (৪২) নিখোঁজের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো তার খোঁজ মেলেনি। পরিবারের দাবি সরকারি এক খতিয়ানভুক্ত জমি বন্দোবস্ত নেয়া কোটিপতি ব্যবসায়ীর সাথে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন।
পৌর এলাকার কামালপুর গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন গত ২৫ বছর ধরে উর্মি গার্মেন্টস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। তার প্রতিষ্ঠান লাগোয়া একই বাজারের আরেক প্রভাবশালী বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বিশেষ একটি মহলকে ম্যানেজ করে ওই জমি বন্দোবস্ত নেন। অভিযোগ রয়েছে, মোজাফ্ফর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন জমি বন্দোবস্ত নেয়া মোশারফ হোসেন। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর মোশাররফ হোসেন ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে মোজাফ্ফরকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উর্মি গার্মেন্টস থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে পৌর শহরের সামনে শালিসী সভা হয়। এরপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে বন্ধ করে আর বাড়ি ফেরেননি মোজাফ্ফর হোসেন।
আরও পড়ৃুন: মেয়াদোত্তীর্ণের পর কমিটি পূর্ণাঙ্গের ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে নেতারা
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় প্রথম একটি জিডি করেন মোজাফ্ফর হোসেন। ওই জিডির দায়িত্ব প্রাপ্ত তদন্তকারি কর্মকর্তা থানার এসআই আলমগীর হোসেন কোন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। এরপর ২৫ জানুয়ারি নিখোঁজ হন মোজাফ্ফার। সেই ঘটনায় মোজাফ্ফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন গত ২৬ জানুয়ারি থানায় আরেকটি জিডি করেন। মণিরামপুর থানার এসআই আবু বক্কর এই জিডির অনুসন্ধানকারি কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে জিডি তদন্তকারী এসআই আবু বক্করকে সাথে নিয়ে পৌরশহরের দক্ষিণ মাথাস্থ মণিরামপুর আইটি পার্ক নামক দোকানে যান প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন। ওই দোকান হতে ২০ হাজার টাকা মূল্যের রিয়েল মি-৯ আই মডেলের মোবাইল সেট কেনা হয়। অভিযোগ রয়েছে মোবাইল সেটটি বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন এসআই আবু বক্করকে উপঢৌকন দিয়েছেন।
জানতে চাইলে দোকান মালিক সাজু জানান, মোবাইল সেট কিনবেন বলে কাপড় ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন তাকে ফোন দিয়েছিল। তিনি দোকানে ছিলেন না। দোকানে তার কর্মচারী মেহেদি ও আজম ছিল। এ ব্যাপারে দোকান কর্মচারী আজম জানায়, একটি রিয়েল মি-৯ আই মডেলের অ্যানড্রয়েড মোবাইল সেট ২০ হাজার টাকায় তাদের কাছে বিক্রি করা হয়।
এসআই আবু বক্কর বলেন, গত সোমবার একটি অভিযানে গিয়ে তার মোবাইল সেটটি হারিয়ে যায়। দোকান পরিচিত না হওয়ার কারণে ফোন কেনার সময় মোশাররফ হোসেনকে সাথে নেন তিনি। মোবাইল সেট কিনে দেয়ার কথা অস্বীকার করে বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, এসআই আবু বক্কর দোকান চিনেন না বিধায় তিনি সাথে গিয়েছিলেন।
মণিরামপুর থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে সন্ধ্যায় নিখোঁজ মোজাফ্ফরের স্ত্রী খাদিজা বেগমসহ বস্ত্র ব্যবসায়ীরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে স্ত্রী খাদিজা জানান, মোশারেফ হোসেন এবং তার ভাড়াটিয়া লোকজন আমার স্বামীকে অপহরণ করে গুম করেছে। আমি আমার স্বামী উদ্ধারসহ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
আরও পড়ুন: বোনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করায় ভগ্নিপতিকে ছুরি মেরে ক্ষোভ মেটালেন শ্যালক
