কল্যাণ রিপোর্ট : সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা রিনা বেগম। রাত কাটান যশোর রেল স্টেশন এলাকার এক ঘরের বারান্দায়। পায়ে ব্যথার কারণে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতেও পারেন না। গতকাল রোববার যশোর টাউন হল ময়দানে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের কম্বল হাতে পাওয়ার পর তার চোখে নামল অশ্রুর বান। তবে এ অশ্রু বেদনার নয়, আনন্দের। ময়লা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে তিনি বললেন, বাবারে, পরের ঘরের বারান্দায় নাত্তিরি থাকি। কিযে জাড় নাগে । জাড়ে কালা হয়ে যাই। দলামলা হয়ে শুয়ে থাকি আর উঠে বইসে থাকি। ঘুম পড়তি পারিনে। আইজগেত্তে আর নাত্তিরি দলামলা হয়ে থাকতি হবেনা। কম্বল খান গায় দিয়ে আরামে ঘুমোতি পারবানে। তাই খুশিতি চোখে ইট্টু পানি আইয়েছে। যারা কম্বল দেছে আল্লা তাগের ভালো করুক।
একই মাঠে কম্বল হাতে পেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মুক্তার হোসেনের মুখে ফুটল আনন্দের ঝিলিক, কম্বলে হাত বোলাতে বোলাতে তিনি বললেন, বুড়ো বয়সে রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। রক্তের জোর আর থাকেনা। এজন্যি শীত বেশি লাগে। এই কম্বলডা গায় জড়ায়ে রাত্তিরি গা গরম থাকপেনে। তিনি আরও বললেন, আল্লাহ বসুন্ধরা আলাগের আরও বেশি বেশি গরিব মানুষগের এইরাম দান করার ক্ষমতা দিক।
বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় কালের কন্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগে রিনা বেগম ও মুক্তার হোসেনদের মতো যশোরের এমন অসহায় শীতার্ত দুই হাজার মানুষকে আজ রোববার কম্বল বিতরণ করা হয়।
কম্বল বিতরণের প্রস্ততিতে গত কয়েকদিন শুভ সংঘ যশোর শাখার সদস্য শেখ শাজাহান, আনিকা তাবাসসুম, নাঈমুল হক হামীম, রাফসান রাফিদ, চিশতী, প্রান্ত কুমার দত্ত, তুলিব, ও সজল দিনে রাতে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি-বাড়ি, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ঘুরে বেছে বেছে প্রকৃত অসহায় মানুষদের মাঝে কম্বলের স্লিপ বিতরণ করেন। এরপর রোববার সকালে তারা টাউন হল ময়দানে কম্বল নিতে আসা অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের এগিয়ে আনা, ঠিকভাবে বসিয়ে কম্বল বিতরণে সুশৃংখল পরিবেশ বজায় রাখেন।
নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল। তিনি অসহায় শীতার্ত মানুষদের হাতে কম্বল তুলে দেন। এসময় তিনি বলেন, কালের কালের কন্ঠ শুভ সংঘ সবসময় সকল শুভ কাজে থাকে। এই শীতে যারা কষ্ট পায় আজকে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় এই কম্বল বিতরণ করছে। আপনারা এই বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করবেন, তারা যেন আরও বেশি বেশি অসহায় গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। আজকে বসুন্ধরা গ্রুপ যে ভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এরকমভাবে অন্যান্য বিত্তশালীরা যদি আরও বেশি করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এদেশের অসহায় মানুষ আর শীতে কষ্ট পাবেনা।
কম্বল বিরতণী অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন শুভ সংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম সজল, কালের কণ্ঠের যশোর প্রতিনিধি ফিরোজ গাজী, নিউজ ২৪ এর যশোর প্রতিনিধি রিপন হোসেন প্রমুখ।
এদিন যশোর সদর উপজেলায় ৬০০, মণিরামপুর উপজেলায় ৩০০, কেশবপুর উপজেলায় ৩০০, চৌগাছা উপজেলায় ২০০, বেনাপোলে ২০০ বাঘারপাড়া উপজেলায় ২০০ ও অভয়নগর উপজেলায় ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়।