নিজস্ব প্রতিবেদক
বিবর্তন যশোরের বহুল প্রশংসিত এবং দেশ বিদেশে দর্শক নন্দিত নাটক ‘মাতব্রিং মঞ্চস্থ হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটির ৪০তম পরিবেশনা মঞ্চস্থ করা হয়। সংগঠনটির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে মাতব্রিং উপভোগ করেছে মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক।
সাধনা আহমেদ রচিত ‘মাতব্রিং’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন ইফসুফ হাসান অর্ক। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কমল বিশ্বাস, সানোয়ার আলম খান দুলু, নিশিত সরকার, সৌরভ অধিকারী, দেবাশীষ মল্লিক, তন্য রায়, তানজিলা আক্তার জিনি, পবন্য বিশ্বাস, দোলা, উপমা সাহা, মালিহা, সাবিবুন্নাহার কাবলী, রুহিনা শারমিন, মৌসুমী আক্তার বন্যা, নওরোজ আলম খান চপল, বৃন্দাবন সাহা, দীপঙ্কর বিশ্বাস, রাম প্রশাদ রায়, স্বপন বিশ্বাস, আতিকুজ্জামান রনি, হাফিজুর রহমান রশি, সুজয় সরকার, শাহীন রহমান, মানস বিশ্বাস ও দেবদুলাল রায়।
নাটকের কথা মাফের গর্ভনাড়ী থেকে উত্থিত রক্তেভেজা রাগকথার মতো সে কোন কালের এক মান্দি-গোত্রনারী সূচনা করেছিলো ফসল তোলার উৎসব ওয়ানগালর, যার মাদকতা মান্দিযুবক কানু সাংমার চোখে নেশার ঘোর লাগিয়ে রাখে। প্রেমে উন্মুক্ত হয়ে আরেক মান্দিযুবতী মিত্তি মারাকের পায়ের মলের শব্দের পেছনে বৃক্ষের আড়ালে আড়ালে অবিরাম ছুটে চলে সে। আর মিত্তি তার পোষা ফইট্যার (খরগোশ) পেছন পেছন ছুটে চলে। তা দেখে কানুর চোখেমুখে ঈর্ষার আগুন লকলকিয়ে ওঠে, কানু ভাবে আমি মিত্তিকে এতো ভালোবাসি কিন্তু মিত্তি খালি তার খরগোশকেই ভালোবাসে কেন? মুহুর্তে কানু তার বর্শা দিয়ে মিত্তির খরগোশকে হত্যা করে। তা দেখে অরণ্যবিদারী চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মিত্তি। কানু গিয়ে মিত্তিকে ধরতেই বাঘিনীর মতো কানুর উপর ঝাপিয়ে পড়ে মিত্তি, কিল চড় লাথিতে ঘুসি মেরে চলে যায় আর তাতেই মিত্তির স্পর্শে পুলকিত কানু। কিছুক্ষণ পরে বনের ভেতর থেকে মিত্তির আতচিৎকার শুনতে পেয়ে কানু ছুটে গিয়ে দেখে এক বুনোষাতৃভূ মিত্তিকে তাড়া করছে। প্রচন্ড লড়াইয়ের মাধ্যমে ষাঁড়বধ করে কানু, তা তা নিয়ে মান্দিপলী ভোজের উৎসবে মাতে, সেখানে আনন্দে নেচে চলে কানুর ঠাকুমা কলাবতী সাংমা, তার বয়স কতো কেউ জানে জানে না, সে অবিরাম বলে চলে মান্দিদের না না উপকথা। প্রেম হয়ে যায় মিতি ও কানুন কিন্তু মিন্ডির মা রুগালা মারাক কানুর সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে না। পরিবর্তীত অর্থনৈতিক জীবন বাস্তবতায় রুগালা মারাক দেখেছে উন্নয়ের নামে বার বার তাদের ভূমি দখল হওয়ার ফলে এখন আর চাষের জমি অবশিষ্ট নেই, জুমচাষ বন্ধ, সব খাবার কিনতে হয় টাকা দিয়ে তাই সে তার মেয়েকে শহরে পাঠাবে টাকা রোজগার করতে। মায়ের একথা শুনে কানু আর মিত্তি জঙ্গল সাফ করে চাষের জমি বের করে আবার চাষ করার মার স্বপ্ন দেখে, একথা শুনে মিত্তির মা মনে করিয়ে দেয় এখন আর জঙ্গল কাটা যায় না, না, কারণ জঙ্গল আর তাদের নয়, জঙ্গল এখন সরকারের। কানু ভাবে জঙ্গল নয় তবে কি মিত্তিও তার নয়? এই সত্যের মুখোমুখি হয়ে পর্বত আর আর নদীর জাতক কানু, টাকা রোজগারে জন্য নগরের কাছে এক বিলাস-বহুল রিসোর্টের রাত প্রহরির চাকুরি নিয়ে চলে যায়। কানুর প্রতীক্ষায় যুবতী মিক্তির দিন যেন আর কাটে না… মিত্তির মা তাকে শহরে পাঠাতে চায়, তবে তবে মিত্তি কানুর জন্য অপেক্ষা করবে কিছুতেই শহরে যাবে না বলে জানায়। এমন সময় ‘দেশ’ হাউজিং এন্ড ডেভেলপিং কোম্পানি’ আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তোলার জন্য মান্দি পল্লীর পুরো এলাকা লিজ নিয়ে নেয়, নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মান্দিদের বসতভিটা উন্নয়নে মান্দিদের সাথে চুক্তি করতে চায় দেশ তারা। কিন্তু কলাবতী সাংমা মান্দিদের মনে করিয়ে দেয় তাদের উপরে বয়ে যাওয়া যুগ-যুগান্তরের অত্যাচারের ইতিহাসের কথা, তাতে মান্দিরা দো-টানায় পড়ে, তারা কি আবার ভূমি হারাবে? আবার উচ্ছেদ হয়ে কোথায় যাবে তারা? হাউজিং কোম্পানি ও মান্দিদের মৈত্রী চুক্তি কি হবে? কানু কি ফিরে আসবে মিত্তির কাছে…..? নাট্যপ্রেমী দর্শক পুরোটা সময় অপলকে উপভোগ করেছে মাতব্রিং।
