নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলি চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে চিঠি দিয়েছিলেন জেলার ছয়টি আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন ভবনের প্রাপ্তি জারি শাখায় তারা পৃথক ছয়টি চিঠি জমা দেন। দুপুরে সিইসি বরাবর দেয়া চিঠি তারা সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করে নেন। তারা জানিয়েছেন, জাপা মহাসচিব এসপির সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। এসপি ‘ছয়টি আসনেই সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এজন্য তারা সেই চিঠি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এসপির বদলি চাওয়া জাপা প্রার্থীরা হলেন যশোর-১ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান, যশোর-২ আসনের মুফতি ফিরোজ শাহ, যশোর-৩ আসনের মাহবুব আলম বাচ্চু, যশোর-৪ আসনের জহুরুল হক, যশোর-৫ আসনের এমএ হালিম এবং যশোর-৬ আসনে জিএম হাসান।
জানা যায়, প্রলয় কুমার জোয়ারদার যশোরে প্রায় তিন বছর কর্মরত আছেন। তিনি সম্প্রতি এসপি থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। পদোন্নতি হলেও তিনি বর্তমানে যশোরে কর্মরত রয়েছেন। তিনি নেত্রকোনা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তার শ্বশুরবাড়ি মণিরামপুর উপজেলায়। পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের শ্বশুর মণিরামপুরের মৃত চৈতন্য কুমার বিশ্বাস। আত্মীয়তার কারণে তিনি মণিরামপুর উপজেলাসহ সমগ্র যশোরের বহু মানুষের সাথে সম্পর্কিত। এ ছাড়া তিনি মণিরামপুরের বর্তমান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে জামাই হিসাবে সুপরিচিত। আত্মীয়তার এ সম্পর্ক আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে মত এখানকার প্রার্থীদের।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের প্রার্থী ফিরোজ শাহ বলেন, যেহেতু যশোরের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারের শ^শুর বাড়ি যশোরে। আমরা শঙ্কা করেছিলাম, স্বজনপ্রীতির কারণে সুষ্ঠু ভোট হবে না। তাই নির্বাচন কমিশন বরাবর সেই শঙ্কার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যশোরের এসপির কথা হয়। তিনি পার্টির মহাসচিবকে এখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পার্টির মহাসচিবের নির্দেশে আমাদের অভিযোগের চিঠি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তিনি জানান, আমরা সবাই ঢাকায় আছি। যশোর ফিরলে এসপি আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন।
যশোর-৩ আসনের জাতীয় পাটির প্রার্থী মাহবুব আলম বাচ্চু জানান, আমাদের দলীয় মহাসচিব মজিবুল আলম চুন্নুর সাথে এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারের সমঝোতা হওয়ায় আমরা ৬ প্রার্থী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, যশোরের সব আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কোন প্রভাব বিস্তার করবে না পুলিশ। যেকারণে দলের মহাসচিবের নির্দেশে আমরা এসপির বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এসপি সাহেব আমাদের ৬ প্রার্থীর সাথে আগামী ১৭ ডিসেম্বর বসবেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) প্রলয় কুমার জোয়ারদারের বদলির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে লিখিত আবেদন করেন মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর আবেদনটি করেন মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জি এম মজিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি গৌর কুমার ঘোষ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সুব্রত ব্যানার্জি ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার। তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমারের নির্দেশে মণিরামপুর থানায় কর্মরত এসআই ও এএসআইরা প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে পক্ষ নিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনের সময় তিনি যশোরে কর্মরত থাকলে জেলার ছটি আসনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে না।