নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে নাশকতা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আওয়ামী লীগের ১৬৭ নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। এরমধ্যে কেশবপুর থানার মামলায় আত্মসমর্পণকারী ৪২ জনকে জামিন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালত। গতকাল রোববার আত্মসমর্পণের পর জামিন নামঞ্জুর হয় ১২৫ জনের। এসময় কারাগারে যাওয়া আসামিরা আদালত প্রাঙ্গনে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।
আদালত সূত্র মতে, এদিন সদর উপজেলার ২০ জন, অভয়নগর উপজেলার ১০৫ ও কেশবপুর থানার মামলায় ৪২ জনসহ মোট ১৬৭ জন স্ব-স্ব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একইদিন ইতিপূর্বে আদালতে আত্মসমর্পণ করা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জহুরুল ইসলামসহ ৫জনকে আরও একটি নাশকতা মামলায় স্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক রোকসানা খাতুন।
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনসহ জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্রে বোমাবাজির ঘটনায় চলতি বছরের গত ১৯ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম। এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনসহ ৯৬ জন। গতকাল রোববার চেয়ারম্যানসহ ২০ জন এজাহারভুক্ত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম, ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, হালিম বিশ্বাস, আবুল বিশ্বাস, কৃষকলীগ নেতা টিটো, আব্দুস সবুর, ফিরোজ হোসেন, আবু খায়ের, আব্দুস ছাত্তার সরদার, মারজন আলী, তারেক হোসেন, আব্দুল হালিম, মনির হোসেন, আরিফ হোসেন, তন্ময়, হরিচাঁদ, হিরাজ মিয়া, রফিকুল ইসলাম রয়েছেন।
তারা সকলে ফতেপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তারা আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিনের আবেদন জানালে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
এছাড়া অভয়নগরের পৃথক দুইটি মামলায় একই দিন ১০৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আনিছুর রহমান মিন্টু, সাবেক হুইপ আব্দুল ওহাবের ছেলে শেখ কাফি স¤্রাট, কমিশনার বিপুল শেখ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শফি কামাল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মামুন, জসিম উদ্দিন, আমির হোসেন শেখ, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস সরদার, সাধারণ সম্পাদক বাচ্চুু খানসহ অভয়নগর উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। তারা রোববার আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিনের আবেদন জানালে বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
এদিকে আত্মসমর্পণের পর জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তারা আদালত প্রাঙ্গণে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।
অপরদিকে একই দিন কেশবপুরের আরেকটি নাশকতা মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিনের আবেদন জানান। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুর রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা ও অভয়নগর উপজেলার আত্মসমর্পণকারী আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ কবীর হোসেন জনি বলেন, মামলার ঘটনার সাথে বাস্তবে কোনো মিল নেই। মনগড়া অভিযোগ দিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের পক্ষে তারা জেলা জজ আদালতে জামিন ধরবেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বক্তব্য নেওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যার দিকে আইনজীবী সৈয়দ কবীর হোসেন জনিকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ বিষয়ে যশোর কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন বলেন, আদালতের নির্দেশে তারা আত্মসমর্পণকারী কেশবপুরের ৪২ জন ছাড়া অন্যদের যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।