নিজস্ব প্রতিবেদক
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও যশোর সদর কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার সদরের ঘুরুলিয়া গ্রামের মেসার্স এআর অ্যাগ্রো কেমিক্যালের সত্ত্বাধিকারী রাজু আহমেদ এই মামলাটি করেছেন। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া মামলাটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি)কে আদেশ দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম।
আসামিরা হলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঢাকার উপ-পরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা ও সরেজমিন উইং) আমিনুল ইসলাম এবং যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী। মামলার বিবরণে জানা গেছে, রাজু আহমেদের বিভিন্ন প্রকার সার উৎপাদনের জন্য তার বৈধ সনদপত্র রয়েছে। তার কারখানায় উৎপাদিত প্রতি কেজি জিংক ফসফেট ১৬০ টাকা এবং ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
অপরদিকে, বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেনটার উৎপাদিত জিংক ফসফেট গ্রোজিন ৩৩০ টাকা এবং ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ম্যাগমা প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। অন্য সারের তুলনায় এই দাম কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে মেসার্স এআর অ্যাগ্রো কেমিক্যালে উৎপাদিত সারের চাহিদা বেশি। এজন্য মেসার্স এআর অ্যাগ্রো কেমিক্যালের কারখানাটি বন্ধ করতে ওই দুই কৃষি কর্মকর্তাকে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেন সিনজেনটা কোম্পানি। সিনজেনটা কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে হেলমেট পরিহিত কিছু লোকজনের সহায়তায় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে মেসার্স এআর অ্যাগ্রো কেমিক্যালের কারখানা ও গুদামের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা সেখানে উৎপাদিত সারের নমুনা না সংগ্রহ করে সার প্রক্রিয়াকরণের নমুনা নিয়ম বহির্ভূতভাবে সংগ্রহ করেন এবং কারখানা সিলগালা করে দেন। পরবর্তীতে কৃষি কর্মকর্তারা সার প্রক্রিয়া করণের নমুনা গবেষণাগারে পাঠান। এই নমুনা পাঠানোর কারণে পরীক্ষাগার থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয় যে, সার মানসম্মত নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যশোর সদর কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী সার ব্যবস্থাপনা আইনে মেসার্স এআর অ্যাগ্রো কেমিক্যালের সত্ত্বাধিকারী রাজু আহমেদকে আসামি দিয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরপর রাজু আহমেদ আদালতে আবেদন করেন, কারখানা থেকে নয় বাজার থেকে তার উৎপাদিত সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তদন্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দেওয়া হয়, বাজার থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের আদেশে বাজার থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠালে সেখান থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয়, সার মানসম্মত। এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজু আহমেদের অব্যাহতি চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। সিনজেনটা কোম্পানির প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কারাখানায় অভিযান ও মামলা দেয়ার ঘটনার তিনি আদালতে এই মামলাটি করেছেন।