নিজস্ব প্রতিবেদক, মনিরামপুর
যশোরের মনিরামপুরে কালিপদ বিশ্বাস (৪৫) নামে এক ব্যক্তির আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার ভোরে মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঝাঁপা বাঁওড়ের বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতুর পূর্ব গেটের একটি দোকান থেকে তাঁর দগ্ধ লাশ উদ্ধার করেছেন।
কালিপদ দাস সেতুর পূর্ব গেটের মোবারকপুর গ্রামের বাঞ্ছারাম বিশ্বাসের ছেলে।
বঙ্গবন্ধু ভাসমান সেতুর পূর্ব গেটের মুদি দোকান রয়েছে কালিপদ দাসের। রাতে সেই দোকানে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। আগুন লাগলে দোকানটি পুড়ে ছাই হয় এবং অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান কালিপদ দাস। এদিকে শনিবার ভোরে দোকানে আগুন জ্বলতে দেখে বাবাকে বাঁচাতে এসে দগ্ধ হয়েছেন কালিপদ বিশ্বাসের ছেলে অমিত বিশ্বাস (১৯)।
মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফায়াত হোসেন বলেন, ‘ভোর ৬টা ২৩ মিনিটে সরকারি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পৌঁছানোর আগে টিনের দোকানের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে আমরা দোকানের ভেতরে থাকা মালিক কালিপদ বিশ্বাসের পোড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করেছি।’
সাফায়াত হোসেন বলেন, ‘দোকানদার রাতে ভেতরে ঘুমানোর সময় মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমান। এমনটি আমরা জানতে পেরেছি। তা ছাড়া দোকানে বিদ্যুতের সংযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ দুটির কোনো একটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’
কালিপদ দাসের প্রতিবেশী সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘অনেক বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারান কালিপদ। পরিবারে তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে আছেন। ২০১৭ সালের দিকে ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপরে দ্বিতীয় ভাসমান সেতু নির্মিত হওয়ার পর আমরা পাড়ার সবাই সেতুর পূর্ব পাড়ে কালিপদ বিশ্বাসকে একটি দোকান ধরিয়ে দিয়েছিলাম।’
সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, কালিপদের দোকানে ফ্রিজসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল ছিল। দোকানে তিনি মুদির মাল ও চা বিক্রি করতেন। রাতে নিয়মিত দোকানে ঘুমাতেন। এই দোকানের ওপর তাঁর সংসার চলত। দোকানদারি করে তিনি মেয়েকে অনার্সে ও ছেলেকে সরকারি পলিটেকনিকে পড়াচ্ছিলেন।
সঞ্জয় চৌধুরী আরও বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁর দোকানে চা পান করে আমরা গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাই। আমাদের সঙ্গে কালিপদও গিয়েছিলেন। রাত ৩টার দিকে তিনি দোকানে ফেরেন। এরপর ভোর ৫টার দিকে তাঁর দোকানে আগুন জ্বলতে দেখে আমরা দৌড়ে এসে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়েছি। তারপর ফায়ার সার্ভিসের লোক আসে। ভোরে বাবাকে পুড়তে দেখে তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন ছেলে অমিত বিশ্বাস। তাঁকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘লাশ আমাদের হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’