নিজস্ব প্রতিবেদক ও চুড়ামনকাটি প্রতিনিধি
শুক্রবার রাতে যশোরের চুড়ামনকাটির বাদিয়াটোলা কুয়েত প্রবাসীকে গুলি করে ও নওয়াপাড়ার আড়পাড়ায় টাইলস মিস্ত্রিকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন, বাদিয়াটোলা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার আব্দুল মালেক মন্ডলের ছেলে কুয়েত প্রবাসী মেহের আলী (৪৫) ও আড়পাড়ার গ্রামের বিলপাড়ার মোদাচ্ছের আলীর ছেলে টাইলস মিস্ত্রি জাহাঙ্গীর আলম মিঠু (৩৩)।
নিহত মেহের আলীর ভগ্নিপতি আব্দুর রহমান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলা গ্রামের পশ্চিম পাড়া গ্রামে দুর্বৃত্তরা মেহের আলীকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি গত ২৬ জুলাই কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন। সেখানে দেশটির হাদিয়া নামক স্থানে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরিবারের স্বজনের দাবি, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক কোন্দলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের স্বজনেরা জানিয়েছেন, গত দুইদিন ধরে মেহের আলী যশোর সদরের বাহাদুরপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে তার এক খালু শ্বশুরের বাড়িতে ছিলেন। ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মেহের নিজ বাড়িতে ফেরেন। এদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ির কলাপসিবল গেটে তালা মারতে যান। তখন পূর্বে থেকে অপেক্ষা করা দুর্বৃত্তরা গেটের সামনে এসেই মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনে স্বজনেরা ছুটে আসেন। দ্রুত উদ্ধার করে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিন রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের মর্গের সামনে আহাজারি করতে দেখা যায় নিহতের ছোট ভাই আবু আব্দুল্লাহকে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাই মেহের আলীসহ তিন ভাই বিদেশে থাকেন। বিদেশ যাওয়ার আগে ভাই বিএনপির রাজনীতি করতেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলও খাটিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভাইয়ের কাছে নেতাকর্মীরা চাঁদাও দাবি করতো। কিন্তু ভাই দিতে চাইতো না। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। এর মধ্যে দীর্ঘদিন পর গত ২৬ জুলাই আমার ভাই দেশে ফিরেছে। আমি ফিরেছি তার মাস খানেক আগে। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে সেইসব নেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে বলে শুনেছি। এসব রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছি। এই হত্যা পূর্বপরিকল্পিত। কেননা আমার ভাইয়ের বাড়ির চারিপাশে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রয়েছে। যারা মেরেছে, তারা আগে থেকে সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে দিয়েছে। স্বজনদের ধারণা, তাকে হত্যার করার জন্য হত্যাকারীরা বাড়ির গেটের সামনে লুকিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল।
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের পাঁচ বছর ও দেড় বছর বয়সী দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের কি হবে! তারা কাকে বাবা বলে ডাকবে! আমার ভাই হত্যার বিচার চাই! আমার ভাইরে কেন মারলো! বারবার ভাই ভাই বলে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বিলাপ করতে দেখা যায় ভাই হারানো আবু আব্দুল্লাহকে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খন্দকার রেজয়ান উদ দারাইন জানান, গুলিবিদ্ধ মেহের আলীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনেন স্বজনেরা। তার মাথার পিছনের দিকে ডান সাইটে গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
এদিকে অপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে একই উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের বিলপাড়া মাঠে। সেখানে নিহত জাহাঙ্গীর আলম মিঠু (৩২) টাইলস মিস্ত্রি। তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় বিলপাড়া মাঠ থেকে মিঠুর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিঠুর স্বজনেরা জানান, তিনি টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ করতেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিঠুকে তার বন্ধুরা চা খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যায়। ৮টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাঠে কাজ করতে গিয়ে এলাকাবাসী তার মরদেহ দেখতে পান। তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তারা।
দুটি হত্যাকাণ্ডের বিষয় যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে ও ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, কি কারণে হত্যাকা- হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না। পুলিশ তদন্ত করছে।