নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ে চলছে ভেল্কিবাজি। একদিনের ব্যবধানে উল্টেপাল্টে যাচ্ছে দাম। দুইদিন আগে (রোববার) কাঁচা মরিচের কেজি ৬শ’ টাকায় উঠেছিল। ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় সোমবার কেজিতে সাড়ে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। মঙ্গলবার ফের বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। এদিন ৪শ’ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়েছে। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বিব্রত হচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারাও। তারা বলছেন, গতকাল দাম কমেছিল। আজ আবার বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাজার। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে ভারতীয় আমদানি কাঁচা মরিচ সরবরাহ কম ছিল। আবার চাষিরাও আমদানি মরিচের ভয়ে বাজারে তোলেনি। ফলে মোকামে মরিচ সংকট ছিল। এই সুযোগে ফের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিনে যশোর বড়বাজার, রেল বাজার ও চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ড কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। লাগাম টানার জন্য সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। আমদানি কাঁচা মরিচ বাজারে এলেও নাগালে আসেনি দাম। মঙ্গলবার সকালে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে চার শ’ টাকা প্রতি কেজি। বিকেলে অপেক্ষাকৃত নি¤œমানের ঝাল বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিন শ’ টাকায়। কেউ কেউ আরও কম দামে বিক্রি করেছেন। এ ধরনের ঝালে কেজিতে অর্ধেকের মতো পঁচা বলে কোনো কোনো বিক্রেতা জানিয়েছেন। এর আগে, যশোরের বাজারগুলোতে রোববার ৬০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। সোমবার বিক্রি হয় ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে। দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মঙ্গলবার মরিচের দামের ঝাঁঝ ফের বেড়েছে। এ নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবার একটিই প্রশ্ন ছিল, হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণ কী?
বাজার করতে আসা তৌফিক হোসেন নামে এক চাকরিজীবী বলেন, ‘মরিচের দাম কমছে; বাড়ছে। বাজার তদারকির কেউ নেই। তিনি বলেন, ‘পত্রিকাতে দেখলাম বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫৬ টাকা দরে মরিচ আমদানি করেছে। সেই মরিচ ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোরের বাজারে ৪০০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। এটার কারণ কি? আমদানির পরে শুষ্কালয় এবং যশোরে আসছে এতো তো খরচ হওয়ার কথা না। ব্যবসায়ীরা এই মরিচের দাম কারসাজি করে ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে। শহরের বেজপাড়া এলাকার থেকে বাজার করতে আসা কল্যাণী সাহা বলেন, ‘কোন কিছুর দাম স্বাভাবিক নেই। এর মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে কাচা মরিচের। আগের ৪০-৫০ টাকায় এক কেজি মরিচ কিনতাম। এখন সেই টাকা আড়াই শ’ মরিচও হচ্ছে না। কি করবো এটা তো জরুরি পণ্য। দাম বাড়লেও কিনতে হচ্ছে। বড় বাজারের নিতাই গৌরি ভান্ডারের বাগান চন্দ্র সাহা বলেন, ‘টানা দু’সপ্তাহ অস্থিরতার পর সরকার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। সেই মোতাবেক রোববার বিকেলে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে কাঁচা মরিচ। খুলনার একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সোমবার সকালেই যশোরের চারটি আড়তে কাঁচা মরিচ দিয়ে যায়। এরপর দাম কমে আসে ২৪০ টাকায়। এর পর আর মরিচ আসেনি। তাছাড়া ফরিদপুরের মধুপুরের মরিচও দাম বেড়েছে। তাই আজ আবারও মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে ৪০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়েছে। রোববার দুইটি চালানের মাধ্যমে চারটি ট্রাকে করে এই কাঁচা মরিচ আমদানি হয়। শুল্কায়ন শেষে রাতে যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করে এই মরিচ। আমদানি আরও বাড়তে পারে বলে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
