নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে যশোরের ৬টি আসনে ২১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৯১৭ জন পর্যবেক্ষক ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অনুমতি পাওয়া ২১টি সংস্থার মধ্যে ১৮টি সংস্থার কোনো কার্যক্রমই নেই যশোরে। এলাকায় নেই সংস্থাগুলোর কোনো কার্যালয় বা কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সচেতন মহলের ভাষ্য মতে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে নেই সক্ষমতা। ভুইফোঁড় অস্তিত্বহীন সংস্থার নাম চূড়ান্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকায় দেখে জেলার সচেতন মহল বিস্মিত হয়েছেন। এমনকি এই তালিকায় নাম থাকাতে পর্যবেক্ষকের তালিকাও নিয়ে হাস্যরসে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তিনটা বাদে অন্যগুলো ভুইফোঁড়। এর চেয়ে অনেক ভালো এনজিও আবেদন করেছিলো। তাদের অনুমতি দেয়নি।
-শাজাহান নান্নু,সহ-সভাপতি এনজিওদের সংগঠন এডাব যশোর
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় আসা ২১টি সংস্থাগুলো হলো- ‘মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস, সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট এন্ড কো-অপারেশন অর্পানাইজেশন (সাকো), লুৎফর রহমান ভুঁইয়া ফাউডেন্ডশ (এলআরবি), ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি), হিউম্যান রাইটস ভয়েস, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, জানিপপ-জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, বাঁচতে শেখা, ইন্টারন্যাশনাল আসফ লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশন, বিয়ান মানি সোসাইট, পিপলস এ্যাসোসিয়েশন ফর স্যোসাল এডভান্সমেন্ট (পাশা), সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি), প্রকাশ গণ কেন্দ্র (পিজিকে), ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি), সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, সংগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বঞ্চিতা সমাজকল্যাণ সংস্থা, ইলেকশন মনিটারিং ফোরাম, সুফিয়া হানিফ ফাউন্ডেশন ও রাজারহাট স্বাবলম্বী সংস্থা। যশোরের ৬টি আসনে ভোট গ্রহণের দিন এসব সংস্থার ৯১৭ জন পর্যবেক্ষক ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেয়েছে। ২১টি সংস্থার মধ্যে বাঁচতে শেখা, বঞ্চিতা সমাজকল্যাণ সংস্থা ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) দৃশ্যমান কার্যক্রম রয়েছে। বাকী ১৮টি সংস্থার মধ্যে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি), প্রকাশ গণ কেন্দ্র, হিউম্যান রাইটস ভয়েস সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সাইনবোর্ডে সীমাবদ্ধ আছে। বাকীগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদিন এনজিও নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরাও সংস্থাটি সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি।
পর্যবেক্ষকের তালিকায় রয়েছে তার মধ্যে হিউম্যান রাইটস ভয়েজ একটি। যশোর শহরের কারবালা রোডস্থ এই সংস্থাটির নির্বাহী প্রধান এ কে এম নুরুল আমিন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় পার্টির জেলা শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে জেলা জাতীয় পার্টির কোন কমিটি নাই। অথচ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত হওয়ার শর্তবলীতে রয়েছে কোন রাজনৈতিক দলের পদবীধারী কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকলে সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল হবে। সংস্থাটির প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকার পরেও পর্যবেক্ষণে ইসির চূড়ান্ত নিবন্ধন পেয়েছে। এই বিষয়ে এ কে এম নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি এখন জাতীয় পার্টির পদধারী কোন নেতা নয়; একজন সাধারণ কর্মী। আবেদনের সকল নির্দেশনা মেনেই আবেদন করেছি বলেই কমিশন আমাদের অনুমতি দিয়েছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে কর্মীদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোন প্রশিক্ষণের দরকার হয় না।’
মণিরামপুরে অবস্থিত ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি) নামের এনজিও। পোস্ট অফিস পাড়ায় সাইনবোর্ড ঝুলানো এনজিওটির কার্যক্রম বহুদিন বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বহুদিন ধরে এ অফিস খোলে না। এখানে কাউকে আসতে দেখা যায় না। তবে নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের তালিকায় নাম আসাতে মাঝেমধ্যে অফিস খোলা হয় বলে জানা গেছে। ডিপির নির্বাহী পরিচালক কানিজ শবনম শাপলা। ২৭ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ সদস্যর নির্বাহী কমিটি রয়েছে এনজিওর। সংস্থার বর্তমান সভাপতি মোকাম্মেল হোসেনের বাড়ি উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী হওয়ায় সংস্থার দিকে নজর দিতে পারেন না। ডিপির নির্বাহী পরিচালক কানিজ শবনম বলেন, আমাদের নওগাঁ জেলায় ভিজিডির কাজ চলমান রয়েছে। মণিরামপুরে কার্যক্রম না থাকায় নিয়মিত অফিস খোলা হয় না। আমার বাবা মরহুম মতিয়ার রহমান এনজিওটির প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে আমি এনজিওর হাল ধরে আছি।
অপরদিকে, ২০০২ সালে ‘প্রকাশ গণ কেন্দ্র’ কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোটে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে কেশবপুর মেইন রোডের পুরাতন গরুহাটা এলাকার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৭৭ জন জনবল কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আ.স.ম আমানুল হাসান তাইমুর কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেই। তিনি পূর্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বয়স্ক শিক্ষা প্রকল্পে কাজ করতেন। পূর্বে এ সংগঠন থেকে একবার পৌর ও একবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে কেশবপুরে এ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন নামে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৭০টি কেন্দ্রে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ইউছুফ আলী জানিয়েছেন।
এনজিওদের সংগঠন এডাব যশোরের সহ-সভাপতি শাজাহান নান্নু বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইসির তালিকায় যে সংস্থা রয়েছে তার মধ্যে তিনটা বাদে বাকীগুলো ভুইফোঁড় অস্তিত্বহীন। তাদের কেউ নামই শুনেনি কখনো। এর চেয়ে অনেক ভালো ভালো এনজিও আবেদন করেছিলো; অথচ তাদের অনুমতি দেয়নি। আর যেসব সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের অস্তিত্ব নেই তাদের দিয়েছে নির্বাচনের পর্যবেক্ষকের অনুমতি।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার আনিচুর রহমান বলেন, তালিকা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটা আমাদের করা না। এসব সংস্থাগুলো ঢাকাতে সরাসরি আবেদন করেছে, তারাই যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন পর্যবেক্ষকের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে।
