নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ বছর আগে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাঞ্চল্যকর মতিয়ার রহমান তরফদার হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চরমপন্থি আক্তারুজ্জামান ডলারকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব। তৎকালীন সর্বহারা পার্টির সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ১৯৯৩ সালে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটেছিল। শনিবার (২৩ মার্চ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আক্তারুজ্জামান ডলার যশোরের অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের মৃত হাশেম আলী তরফদারের ছেলে।
র্যাব জানিয়েছে, আসামি আক্তারুজ্জামান ডলার দীর্ঘদিন ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিলেন। তাই তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্য পরিচালনা করেন আদালত। পরে ২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত ডলারের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ প্রমাণ হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে পর দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে দেশে-বিদেশে পলাতক ছিলেন তিনি। প্রথম দিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেরারি জীবনযাপন করতে শুরু করেন ডলার। একপর্যায়ে নিজের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে মাহমুদুল হাসান নামে নতুন নাম ধারণ করে ও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় আত্মগোপনে ছিলেন। অবশেষে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগরীর মানিকদী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালে র্যাবের হাতে তিনি গ্রেফতার হন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী মতিয়ার রহমান তরফদার ও গ্রেফতার আক্তারুজ্জামান ডলার একই গ্রামের দুই পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ডলার ছিলেন তৎকালীন সর্বহারা পার্টির সক্রিয় সদস্য। ভুক্তভোগী অভয়নগর এলাকার রাজঘাটে অবস্থিত কারপেটিং জুট মিলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার তোযাম চেয়ারম্যানকে সর্বহারা পার্টির ডলার ও তার দোসররা হত্যা করে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেন। ছিনিয়ে নেয়া বন্দুকটি আসামি আক্তারুজ্জামান ডলার বস্তায় ভরে আসলাম নামে এক ভ্যানচালকের ভ্যানে তেজপাতা আছে জানিয়ে এটি যশোরের নোয়াপাড়ায় নিয়ে যেতে বলেন। ভ্যান চলার সময় মাঝে মাঝে ইটের ধাক্কায় খটখট আওয়াজ হওয়ায় ভ্যানচালক আসলাম পথিমধ্যে পায়রা বাজারে ভুক্তভোগী মতিয়ার রহমানকে ঘটনাটি বলেন। তখন সে বস্তা খুলে একটি বন্দুক পান, যার গায়ে কয়েক দিন আগে মৃত তোযাম চেয়ারম্যানের নাম সংবলিত ছিল। তখন তৎকালীন চেয়ারম্যান আমিন সাহেবের মধ্যস্থতায় বন্দুকটি পায়রা বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এলাকায় খবর প্রকাশ পায়, মৃত তোযাম চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় ডলারসহ চরমপন্থি অন্য সদস্যরা জড়িত। এই ঘটনায় ডলারসহ তার চরমপন্থি দলের অন্য সদস্যরা ভুক্তভোগীকে শায়েস্তা করার ছক করতে থাকেন।
এরপর ১৯৯৩ সালের ৩ মার্চ ডলারসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সশস্ত্র চরমপন্থি পার্টির দল ভুক্তভোগীর ছোট ভাইকে রাইস মিলে বেঁধে রেখে পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। ভুক্তভোগীকে ঘরের বেড়া কেটে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে বাড়ির সামনেই রাত ১০টার দিকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ২২টি কোপ মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ভুক্তভোগীর বাবার একটি বন্দুকও ছিনিয়ে নিয়ে যান। মূলত চরমপন্থি দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় মতিয়ার রহমান তরফদার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরবর্তীকালে আসামির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় হত্যা মামলাটি হয়। মামলা হওয়ার পরপরই গ্রেফতার আসামি নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যান।
আসামি আক্তারুজ্জামান ডলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
