নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর-৩ (সদর) সংসদীয় আসনভূক্ত পাঁচটি ইউনিয়নকে অন্য নির্বাচনী আসনের সঙ্গে যুক্ত করার ‘ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যশোর। বুধবার সকাল থেকে সদর আসনের সাধারণ ভোটাররা শহরের বিক্ষোভ মিছিল ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। এদিকে বিদ্যমান আসনসীমানা অক্ষুন্ন রেখে ঘোষিত সময়ের মধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে জেলা বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
এ সময় লিখিত বক্তব্যের জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, একটি মহল যশোরের দীর্ঘদিনের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিচ্যুতি ঘটিয়ে যশোরের সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ইতোমধ্যে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস জাতির সামনে স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপামর জনসাধারণ ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে সংসদ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ঠিক এমনই একটি নাজুক মুহূর্তে সংসদীয় আসন পূনর্বিন্যাসের যে কোন চেষ্টার আমরা বিরোধিতা করি। এর কোন প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বর্তমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র ২০০৮ সালের অনির্বাচিত সরকারের সময়ই এর ব্যত্যয় ঘটানো হয়। সেই নির্বাচনের অনিয়মই দেশে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করে।
যশোর-৩ (সদর) আসনটি এঅঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সূতিকাগার। ১৪ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনটি আমাদের মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। প্রায় ২৫ লাখ মানুষের স্বপ্ন আশা আকাঙ্খা ঘিরে আছে এই সংসদীয় আসন। এর কোন ব্যবচ্ছেদ কিংবা পরিবর্তন আমরা মেনে নেবোনা। ঠিক তেমনি যশোর- ৬ নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তনও কোনভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত আসনের সীমানা চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, তারমধ্যে যশোরের ৬টি আসনও ছিল। কিন্তু আমরা সম্প্রতি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আগামী ২৫ আগস্ট যশোর-৩ ও যশোর- ৬ সংসদীয় আসনের দীর্ঘদিনের চলমান ও পুনঃঘোষিত সীমারেখা নিয়ে কিছু ব্যক্তির আপত্তি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। যেকোন বিচারেই কোন সংসদীয় এলাকায় জনমত একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনমতকে উপেক্ষা করে কিংবা তাদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত আইন, সংবিধান, রেওয়াজ ও রীতির বিরুদ্ধ। আমরা নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক হবার আহ্বান জানাই।
যশোর এদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। প্রাচীন এই জনপদের রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার ও ঐতিহ্য। রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে আমাদের। যশোর একটি ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থানের ঐতিহ্য ছিল, যদিও ফ্যাসিস্ট সরকার তা ধ্বংস করেছিল। সীমান্তবর্তী শহর হিসাবে এ জেলার সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার রয়েছে যোগাযোগের চমৎকার নেটওয়ার্ক। যশোর তাই খুলনা বিভাগের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত ফেব্রুয়ারি-২০২৬ ইং সময়সীমার মধ্যে মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগকে বিলম্বিত করার লক্ষ্যে একটি মহলের অব্যাহত অপচেষ্টার অংশ এটি হতে পারে। আমরা মনে করি একটি নির্ধারিত সীমারেখায় বছরের পর বছর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আসনের ভোটারদের ভেতর একটি পরিবারের মতো আসনভিত্তিক যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও বন্ধন তৈরি হয়েছে সেটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়–ক এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, শহিদুল বারী রবু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রেজা দুলু, আব্দুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান খান, অ্যাড. হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সদর আসনের সাধারণ ভোটররা শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় অবস্থান গ্রহণ করে। পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করেন।